দূরযাত্রা রিপোর্ট ঃ ঝালকাঠি সদর হাসপাতালের এম্বুলেন্স চালক মোঃ মহসীনের বিরুদ্ধে দীর্ঘ দিন একই কর্মস্থলে থেকে ব্যাপক অনিয়ম ও দূর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। নার্সিং অধিদপ্তরের উন্নয়ন খাতের পিয়ন পদে চাকুরী নিয়ে তিনি এখন রাজস্ব খাতের ড্রাইভার পদে কি ভাবে বেতন নিচ্ছেন তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। অবশ্য তিনি বলছেন বৈধ প্রক্রিয়ায়ই তার রাজস্ব খাতের ড্রাইভার পদে নিয়োগ হয়েছে।
সূত্র জানায়, শুধু তাই নয় তিনি এখানে চাকুরি করে বিশাল অর্থ সম্পদের মালিক হয়েছেন। বরিশালে পপুলার ডায়গনষ্টিক সেন্টারের পিছনে ৫ শতাংশ জমিতে নির্মান করেছেন বিলাশ বহুল ৪ তলা বাড়ি। তার বাড়ির ২য় তলার ভাড়াটিয়া খাবার হোটেল ব্যবসায়ি পরিচয়ে মিজানুর রহমান বাড়ির মালিকের বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
ইতিমধ্যেই তার বিরুদ্ধে গাড়ির জালানী তৈল নিয়ে ১৬ লাখ টাকার অনিয়মের তদন্ত শুরু হয়েছে। এছাড়াও নানা অনিয়মসহ অন্য কাউকে এম্বুলেন্স চালাতে দিয়ে দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্থের বিষয়ে জানতে চেয়ে ২৫ অক্টোবর মো. মহসীনকে কারণ দর্শানোর নোটিশ করেছে হাসপাতালের তত্বাবধায়ক। জানাযায় স্বাস্থ্য বিভাগের উপর মহলে তার সখ্যতা থাকায় তার বিরুদ্ধে কেহই মুখ খুলতে সাহষ পায়না। তাই হাসপাতালের নিরীহ কর্মকর্তা কর্মচারিদের প্রশ্ন শেষ পর্যন্ত তদন্ত কমিটি সঠিক রিপোর্ট দিতে পারবে কিনা। নাকি তত্ত্বাবধায়ককে ম্যানেজ করে তদন্ত চাপা দেয়া হবে।
হাসপাতাল সূত্র জানায়, ১০০ শয্যা বিশিষ্ট এই সদর হাসপাতালের সম্প্রতি ৭ মাসের বকেয়া তেল খরচে ১৬ লাখ টাকার ৩টি গাড়ির বিল ভাউচার দাখিল করে এম্বুলেন্স চালক মহসীন একাই। এই সূত্র ধরেই তার অনিয়ম ও দূর্নীতির থলের বিড়াল বেড়িয়ে আসে। বিষয়টি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দৃষ্টিতে সন্দেহের সৃষ্টি হয়। যা খতিয়ে দেখতে হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. শামীম আহমেদ গত ১১ অক্টোবর ৫ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেন। এতে গাইনী বিভাগের জুনিয়র কনসালটেন্ট ডা. মো. মাহমুদ হাসানকে সভাপতি করা হয়। প্রথমে ৩ দিনের সময় দেয়া হলেও কমিটি তদন্তের স্বার্থে সময় বাড়িয়ে নেন। ১১ অক্টোবর ১১৩২ নং স্বারকে তদন্ত কমিটিকে দেয়া চিঠিতে তত্ত্বাবধায়ক উল্লেখ করেন, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে আগষ্ট পর্যন্ত এ্যাম্বুলেন্সের তেলের বকেয়া বাবদ ১৬ লাখ টাকার অধিক বিল পরিশোধের জন্য পেট্রোলপাম্প মালিক থেকে বলা হয়েছে। কিন্তু তেল খরচের তুলনায় বিলের পরিমান বেশি বলে পরিলক্ষিত হচ্ছে। তাই এম্বুলেন্সের মিটারের সাথে তেল খরচের হিসাব ঠিক আছে কিনা তা তদন্ত হওয়া প্রয়োজন। তেল খরচের যথার্থতা নিরুপন করে অনিয়ম আছে কিনা তদন্ত করে ৩ দিনের মধ্যে কমিটিকে রিপোর্ট দিতে বলেন তত্ত্বাবধায়ক। তদন্তে অগ্রগতির বিষয়ে কমিটির ২ জন সদস্য কোন কথা বলতে রাজি হননি। তবে সঠিক তদন্তের স্বার্থে সময় বাড়ানো হয়েছে এবং কার্যক্রম চলমান আছে বলে তারা জানান। এ অবস্থায় গত ২৫ অক্টোবর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ১১৯৫ নং স্বারকে এম্বুলেন্স চালক মোহসিনকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেন। নোটিশে উল্লেখ করা হয়, এম্বুলেন্সের জ্বালানী গ্রহন ও খরচ উপস্থাপন, নতুন এম্বুলেন্সটি দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত এবং অপর এম্বুলেন্স চালক মো. শাহাদাৎ হোসেনকে দায়িত্ব বুঝিয়ে দেয়ার বিষয়ে অনিয়ম গুলো নিম্নরুপ। যা হচ্ছে, জ্বালানী বকেয়া ১৬ লাখ টাকার অধিক বিল অত্যাধিক প্রতীয়মান হয়েছে। কারণ সেই তুলনায় গাড়ি চলেনি এবং মুভমেন্ট রেজিষ্ট্রটার ব্যবহার করা হয়নি। পাম্প কর্মচারীদের সাথে আতাত প্রতীয়মান হয়। ইতিপূর্বে নতুন এম্বুলেন্সটি (ঢাকা মেট্রো ছ-৭১৩৩৪৮) বহিরাাগত চালক দিয়ে চালিয়ে দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত করা গুরুতর অনিয়ম। পাশাপাশি হাসপাতালের অপর এম্বুলেন্স চালককে গাড়ির দায়িত্ব বুঝিয়ে দেয়ার নির্দেশনা প্রতিপালন করেনি মো. মহসিন। এসব কারণ তত্ত্বাবধায়ক নোটিশে উল্লেখ করে চাকুরি বিধিমালা অনুযায়ি আইনত দন্ডনীয় বলে উল্লেখ করেন। আরো বলা হয় তদন্ত কমিটির নিকট বকেয়া বিলের সত্যতা ও হিসাব উপস্থাপনের জন্য বলা হয়েছে। সেই সাথে কেন আপনার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ এনে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবেনা ৭ দিনের মধ্যে জবাব দিতে বলেছে তত্তাবধায়ক।
এছাড়াও ১৯৮৫ এবং ২০১৮ নিয়োগ বিধি অনুযায়ি নার্সিং অধিদপ্তরের পিয়ন থেকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ড্রাইভার পদে মহসীনের নিয়োগ পাবার বিধান আছে কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। একই সাথে তার বিরুদ্ধে করোনাকালীন সময় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে প্রনোদনা বরাদ্দ এনে দিতে ১৫% উৎকোচ নেয়ার অভিযোগ রয়েছে। প্রতি মাসে হাসপাতাল থেকে ভূয়া গর্ভবতী মায়েদের নাম ঠিকানা ও মোবাইল নম্বর খাতায় উঠিয়ে মহসীন সরকারি তেলের বিপুল পরিমান টাকা আত্মসাত করেন। অভিযোগ লগ বইয়ে উল্লেখিত ভূয়া মোবাইল নম্বরে ফোন দিলেই বেরিয়ে আসবে থলের বিড়াল। জানাযায় ৪শ টাকা এ্যাম্বুলেন্স ভাড়ার পরিবর্তে ১১শ টাকা ভাড়া আদায় করেন রোগীদের কাছ থেকে। তার চালিত এ্যাম্বুলেন্সে সরকারি লেখা থাকলেও তিনি সমগ্র বাংলাদেশ লিখে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া জেলা ও বিভাগের বাহিরে যান। রাতে তিনি ঝালকাঠির বাহিরে রত্রিযাপন করেন এ্যাম্বুলেন্স নিয়ে। এমন অভিযোগের প্রেক্ষিতে হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ড্রাইভার মহসীনকে চিঠি দিয়ে জানতে চান বলে সূত্র জানায়।
এসব বিষয়ে এ্যাম্বুলেন্স চালক মহসীন বলেন, বরিশালের বাড়ি হাউজ বিল্ডিং লোন নিয়ে ২০২০-২১ সনে করেছেন জানিয়ে তিনি বলেন, আমাকে শোকজ করার জবাব দিয়েছি। আর তেলের হিসাবে গড়মিল হলে তা তদন্তে বেরিয়ে আসবে। তদন্ত কমিটি আমার বক্তব্য নিয়ে তদন্ত করছে। এছাড়া আমাকে দায়িত্ব বুঝিয়ে দেয়ার যে চিঠি দেয়া হয়েছে অপর চালককে তা তিনি নেননি। কারণ তার চাকরি স্থায়ী না হওয়ায় সে দায়িত্ব বুঝে নেয়নি।
তেল হিসাবে ১৬ লাখ টাকার গড়মিল তদন্তের বিষয়ে কমিটির সভাপতি গাইনী কনসলটেন্ট ডা. মাহমুদ হাসান জানান তদন্তের কাজ শেষ পর্যায়ে। এখন পেট্রোল পাম্প মালিককে আমাদের সামনে এসে তার বক্তব্য উপস্থাপন করতে বলেছি। কিন্তু তিনি ব্যস্ততার কারণে আসতে না পারায় একটু দেরি হচ্ছে। খুব শিগ্রই রিপোর্ট দাখিল করা হবে। ঝালকাঠি সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. শামিম আহমেদ জানান মহসীনের বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ আছে। কিন্তু তাকে একাধিকবার সতর্ক করেও সংশোধন করা যাচ্তছেনা। তদন্ত রিপোর্ট পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।