দূরযাত্রা রিপোর্ট ঃ ঝালকাঠি সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. শামিম আহমেদের বিরুদ্ধে লাখ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। এছাড়াও কর্মচারীদের হয়রানী, বিনা কারণে শোকজ, তদন্ত কমিটি গঠন, উৎকোচ দাবি, ভূয়া ভাউচারে অর্থ আত্মসাৎ, ক্ষমতার অপব্যবহারসহ বিভিন্ন অনিয়ম দূর্নিতীর অভিযোগ রয়েছে।
আলোচিত এই তত্ত্বাবধায়ককে চলতি বছরের ৭ মার্চ রংপুর সিভিল সার্জন পদ থেকে বদলী করে ঝালকাঠিতে পাঠানো হয়। চলতি বছরের ১১ মার্চ তিনি ঝালকাঠিতে যোগদান করেন। রংপুরে স্বাস্থ্য সহকারীদের কোভিট-১৯ এর বরাদ্দ ২৫ লাখ টাকা আত্মসাতের ঘটনায় তাকে অবরুদ্ধ করে রাখার ঘটনায় তিনি সমালোচিত হন। এ বিষয়ে রংপুর স্বাস্থ্য সহকারী এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মাসুদার রহমান অপু ও মিঠাপুকুর উপজেলা স্বাস্থ্য সহকারী ইলিয়াস হোসেন জানান, রংপুর জেলায় একদিনে ১ কোটি করোনার টিকা প্রদানের পারিশ্রমিক অনুদান বরাদ্দ ছিল ২৫ লাখ টাকা। তখন রংপুরের সিভিল সার্জন পদে কর্মরত ছিলেন ডা. শামিম আহমেদ। ব্যাংক থেকে এ বরাদ্দ তুলে আমাদের না দিয়ে আত্মসাতের ঘটনায় তাকে শাস্তিমুলক বদলী করা হয় ঝালকাঠিতে।
নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানাযায়, রংপুর থেকে ঝালকাঠি আসতে বদলী ভ্রমন বিল বাবদ ১ লাখ ১০ হাজার টাকা টাকা খরচ দেখান তত্ত্বাবধায়ক। যা অবিশ্বাস্য ঘটনা। তিনি ডক্টরস কোয়াটারে একটি ফ্লাট নিয়ে থাকলেও মাত্র ১০% ভাড়া কাটেন। নির্ধারিত পূর্ণ ভাড়া না কেটে সরকারকে মোটা অংকের রাজস্ব ফাঁকি দিচ্ছেন। হাসপাতালের জরুরী বিভাগের এসি এনে তার সরকারি কোয়াটারের বাসায় ব্যবহার করছেন। হাসপাতালে এ্যাম্বুলেন্সের বকেয়া জ্বালানী বাবদ ১৬ লাখ টাকায় চালক মো. মহোসীনের বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ তোলেন। গাড়ি চালকের কাছে উৎকোচ দাবি করে না পেয়ে তত্ত্বাবধায়ক তদন্ত কমিটি করিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। পেট্রোল পাম্পের ৭ মাসের এই বরাদ্দ পেয়ে তা পরিশোধ না করায় রোগীরা ফ্রী এ্যাম্বুলেন্স সেবা থেকে বঞ্চিত। কিন্তু অভিযোগের সত্যতা না পাওয়ায় আবার দ্বিতীয় দফায় তদন্ত কমিটি করেন তত্ত্বাবধায়ক। চালক মহসীন জানান, তত্ত্বাবধায়কের দাবি করা ১ লাখ টাকা উৎকোচ না দেয়ায় তদন্তের নামে হয়রানী করছে। তদন্ত প্রতিবেদন দেয়ার আগেই আমাকে শোকজ করে জবাব চান। তার বিরুদ্ধে ভূয়া গর্ভবতী বহনের ঠিকানা দেখিয়ে নিজ ভ্রমনে এ্যাম্বুলেন্স ব্যবহারের অভিযোগ রয়েছে। এমনকি প্রতি মাসে ২৫/৩০ টি ভূয়া গর্ভবর্তী রোগী বহন দেখিয়ে এ্যাম্বুলেন্স জ¦ালানীর সরকারী অর্থ আত্মসাৎ করছেন। এ ছাড়াও হাসপাতালের জেনারেটর মেরামতের চিঠি ইস্যু করে তিনিই আবার জেনারেটরের তেল ক্রয়ের ভূয়া ভাউচার দেখিয়ে বিপুল পরিমান অর্থ আত্মসাত করেন। ডাক্তারদের আবাসিক ভবনে চুক্তি ভিত্তিক গাড়ি চালক মো. শাহাদাৎকে রেখে তার মাধ্যমে অপকর্ম করিয়ে ফায়দা নিচ্ছেন তত্ত্বাবধায়ক।
এসব বিষয়ে সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. শামিম আহমেদ বলেন, বাসার এসি গনপূর্ত বিভাগের ঠিকাদারের মাধ্যমে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। সকল বিল ভাউচার সঠিক ভাবে অনুমোদন করা হয়। আমার বাস ভবনে ২৫% ভাড়া কর্তন করছি। বদলী ভ্রমন বিল সরকারি নিয়মেই নিয়েছি। কর্মচারীদের অহেতুক শোকজ সঠিক নয়। এছাড়াও তার বিরুদ্ধে অন্য অভিযোগের কোন সত্যতা নেই বলে তিনি জানান।
এ বিষয়ে ঝালকাঠি সিভিল সার্জন ডা. এইচ এম জহিরুল ইসলাম বলেন, আমিও শুনেছি তার বিরুদ্ধে কিছু অভিযোগ। তবে এর কাগজপত্র আমার দেখার এখতিয়ার নেই। এসব বিষয়ে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ তদন্ত করে সত্যতা যাচাই করতে পারেন।