দূরযাত্রা রিপোর্ট ঃ ঝালকাঠি সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. শামিম আহমেদের বিরুদ্ধে লাখ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। এছাড়াও কর্মচারীদের হয়রানী, বিনা কারণে শোকজ, তদন্ত কমিটি গঠন, উৎকোচ দাবি, ভূয়া ভাউচারে অর্থ আত্মসাৎ, ক্ষমতার অপব্যবহারসহ বিভিন্ন অনিয়মের কারণে অতিষ্ট কর্মচারীরা।
তিনি প্রায়ই কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকেন। জানাযায় তিনি চলতি বছরের ১১ মার্চ যোগদান করে এ পর্যন্ত ৮০ দিন অবৈধ ছুটি ভোগ করেন। তার ব্যক্তি স্বার্থ হাসিল না হওয়ায় ২০২২-২৩ অর্থ বছরে সরকারি ঔষধ সরবরাহ খাতের প্রায় ১ কোটি ৮৩ লাখ টাকা ফেরত নিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। যথা সময়ে এ টাকার ঔষধ ক্রয়ে ব্যর্থ হওয়ায় সরকারি সরবরাহের ঔষধ সংকটের কারণে বঞ্চিত রোগীরা। তার অধিকাংশ উদ্দেশ্যমূলক সিদ্ধান্তের কারণে হাসপাতালের ক্রয় সংক্রান্ত কমিটি দ্বিমত পোষন করলেও তিনি একক সিদ্ধান্তে ফায়দা হাসিল করেন বলে অভিযোগ। একই ভাবে ২০০২৩-২৪ অর্থ বছরে হাসপাতালে ডেঙ্গু পরীক্ষার কীট থাকা সত্বেও বিশাল অংকের কীট ক্রয় করেন। ক্রয় কমিটির চাহিদা না নিয়ে আনা এ অতিরিক্ত কীটের বিনিময়ে স্বার্থ হাসিল না হওয়ায় রাজাপুর ও নলছিটি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রেরণ করেন তিনি। একই অর্থ বছরে হাসপাতালের প্রায় ৫০ টি জানালার রঙ্গিন গ্লাস কাগজে কলমে দেখিয়ে লাগানো হয়েছে ২০টি। গণপূর্তের যোগসাযশে এ ভাবে তিনি তদারকি কমিটির সুপারিশ ছাড়াই সম্পূর্ন দেখিয়ে নিজেই প্রত্যয়নপত্র দিয়ে ফায়দা নিচ্ছেন বলে তথ্য রয়েছে। বিশাল স্বার্থের বিনিময়ে ২০২৩-২০২৪ অর্থ বছরের এমএসআর টেন্ডার কাজ চাপা দিতে ঝালকাঠি থেকে প্রকাশিত কোন দৈনিক পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দেননি।
হাসপাতালে রোগীর খাবার সরবরাহের ঠিকাদার মো. স্বপন জানান, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ১২৫ টাকার স্থলে ১৭৫ টাকা বরাদ্দের নির্দেশনা দেয় ১ বছর আগে। কিন্তু অসৎ উদ্দেশ্যে তত্ত্বাবধায়ক তা না দেয়ায় আমি উচ্চ আদালতে রীট করেছি। অথচ অন্য সকল উপজেলা হাসপাতালে ১৭৫ টাকায় খাবার সরবরাহ হচ্ছে। হাসপাতালের ভিতর ও বাহিরে পরিস্কার পরিচ্ছন্ন কাজ দেখিয়ে এছাড়াও ভূয়া বিল ভাউচারে বিপুল অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে। বিল ভাউচারে তত্ত্বাবধায়ক নিজেই পরিশোধকারী নিজে মঞ্জুরকারী এবং নিজেই গ্রহণকারী দেখিয়ে এ্যাম্বুলেন্স রক্ষণাবেক্ষণ, পরিচ্ছন্নতাসহ লাখ লাখ টাকার বিভিন্ন ভূয়া বিল উত্তোলন করেন। হাসপাতালের ভূয়া সংস্কার কাজ দেখিয়েও অর্থ আত্মসাৎ করেন। বিদ্যুৎ না গেলেও জেনারেটর চালু দেখিয়ে জ্বালানির ভূয়া ভাউচারে অর্থ আত্মসাত করেন। এ সংক্রান্ত দাপ্তরিক বিল ভাউচার তদন্ত হলেই বেড়িয়ে আসবে থলের বিড়াল। তার বিরুদ্ধে গত ১৫ আগষ্টের জন্য বরাদ্দ টাকাও মিথ্যা ভাউচারে আত্মসাৎ করার অভিযোগ রয়েছে।
এসব বিষয়ে সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. শামিম আহমেদ বলেন, বাসার এসি গনপূর্ত বিভাগের ঠিকাদারের মাধ্যমে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। সকল বিল ভাউচার সঠিক ভাবে অনুমোদন করা হয়। আমার বাস ভবনে ২৫% ভাড়া কর্তন করছি। বদলী ভ্রমন বিল সরকারি নিয়মেই নিয়েছি। কর্মচারীদের অহেতুক শোকজ সঠিক নয়। এছাড়াও তার বিরুদ্ধে অন্য অভিযোগের কোন সত্যতা নেই বলে তিনি জানান।
ঝালকাঠি সিভিল সার্জন ডা. জহিরুল ইসলাম বলেন, তত্ত্বাবধায়কের বিষয়ে কিছু অভিযোগের কথা শুনেছি। তবে এসব দেখার এখতিয়ার আমার নেই। উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ অভিযোগ পেলে সত্যতা যাচাই করে দেখতে পারেন।