4 December- 2024 ।। [bangla_date]


ঝালকাঠির সুগন্ধা নদীতে প্রায় প্রতিদিনই এভাবেই অবৈধ ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন করছে বালু সিন্ডিকেট-দূরযাত্রা।

ঝালকাঠির সুগন্ধা নদীতে সিন্ডিকেটের অবৈধ বালু উত্তোলন থামছেনা

দূরযাত্রা রিপোর্ট ॥ বালু মহল ঘোষনা করা না হলেও ঝালকাঠির সুগন্ধা নদীতে কোন ভাবেই থামানো যাচ্ছেনা অবৈধ সিন্ডিকেটের বালু উত্তোলন। এতে নিশ্চিহ্ন হতে চলছে দিয়াকুল, কিস্তাকাঠি ও দেউরী গ্রাম। প্রকাশ্যে প্রতিযোগীতার এই বালু উত্তোলনে কিস্তাকাঠি সাইক্লোন শেল্টার ও দিয়াকুল খেয়া ঘাটের বিশাল ব্রীজ হুমকীর মুখে পরেছে। প্রশাসনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে বালু উত্তোলন করায় ঝালকাঠি শহরের রক্ষা বাঁধ, কুতুবনগর বাসষ্ট্যান্ড যে কোন সময় নদী ধ্বসে বিলীন হতে পারে।
জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রায়ই নলছিটির সুগন্ধা নদী এলাকায় অভিজান চালানো হচ্ছে। ড্রেজার শ্রমিক আটক, জেল জরিমানা করা হলেও কোন ভাবে রোধ করা যাচ্ছেনা এই অবৈধ বালু উত্তোলন। তবে ঝালকাঠির সুগন্ধা এলাকায়ও অনুরুপ অভিযান অব্যাহত রাখা জরুরী হয়ে পরেছে। বালু মহল ঘোষনা না করা সত্বেও প্রতিদিন লাখ লাখ ফুট বালু উত্তোলন করায় সরকার কোটি কোটি টাকা রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এ অবস্থায় সব হারানো নদী পাড়ের মানুষরা গণস্বাক্ষর উঠিয়ে প্রদানমন্ত্রীর কাছে বালু উত্তোলন বন্ধে খোলা চিঠি পাঠানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে জানা যায়।
সুগন্ধায় ভাঙ্গন এলাকার সর্বহারা কৃষক মজিদ আলী, কেরামত মিয়া, আলমগীর হোসেন, গৃহীনি রোকসানা বেগমসহ আরো অনেকে বলেন, বালু উত্তোলন প্রতিরোধে ঝালকাঠি এলাকায় বেশি বেশি ভ্রাম্যমান আদালতের অভিযান জরুরী হয়ে পরেছে। এলাকার একটি সিন্ডিকেট বিকেল থেকে শুরু করে রাত অবধি বালু উত্তোলন করছে। এতে ইতি মধ্যেই নদীতে বিলীন হয়ে গেছে কিস্তাকাঠি মসজীদ ও খেয়াঘাট, দিয়াকুলের মসজীদ মাদ্রাসা ও খেয়াঘাট এবং শতশত একর আবাদী জমি ও বসত বাড়ি। এসব হারিয়ে শত শত পরিবার নিঃস্ব হয়ে অন্যের জমিতে আশ্রয় নিয়েছে। অনেকে ভিক্ষাবৃত্তি পেশায় জড়িয়ে পরেছে।
ঝালকাঠিকে বালু মহল ঘোষনা করা না হলেও একটি সিন্ডিকেট ম্যানেজ প্রক্রিয়ায় এ বানিজ্য করে রাতারাতি কোটিপতি হয়ে গেছে। ইতিপূর্বে দিনের বেলায় বালু উত্তোলন বন্ধ রাখা হলেও এখন প্রকাশ্যেই হচ্ছে। এলাকাবাসির অভিযোগ প্রতিদিন ৭টি ড্রেজারে বালু উত্তোলন করে ১০ থেকে ১৫ টি জাহাজে সরবরাহ করা হচ্ছে। এলাকাবাসির অভিযোগ ইতিপূর্বে স্থানীয় প্রশাসনের হস্তক্ষেপেও বালু উত্তোলন বন্ধ না করায় প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, ভূমি ও পানি সম্পদ মন্ত্রী বরাবরে অভিযোগ দিতে গণস্বাক্ষর নেয়া হচ্ছে। কিস্তাকাঠি গ্রামের আসলাম হাওলাদার ও মসজীদের ইমাম রবিউল ইসলাম জানান, ড্রেজারের মেশিনে বালু নীচ থেকে টান দেয়ার সাথে সাথে নদীর পাড় ধ্বসে পরছে। দিয়াকুল গ্রামের গ্রামবাসি জানায় তাদের অস্থায়ী ভাবে নির্মান করা বিশাল ব্রীজটি আবারো নদীতে পড়ার উপক্রম হয়ে পরেছে। বালু খেকোদের অবৈধ বণিজ্যের রোসানলে দিয়াকুল ১ নং মৌজার ৪৬০ কুরা জমি বিলীন হয়ে নদীর অপর প্রান্তে চর পরেছে। প্রতিনি বিকেল থেকে গভীর রাত অবধি এসব ড্রেজারে উঠনো বালু সকালে শহরাঞ্চলে পাইপ ও ট্রলির মাধ্যমে সরবরাহ করা হচ্ছে। দিয়াকুল গ্রামের আবুল হোসেনের বাড়ি সংলগ্ন বেড়িবাাঁধ একবার নদীতে ধ্বসে পরায় এলাকার মেম্বর শাহিন আকন তা বেঁধে দিয়েছে। মেম্বর শাহিন আকন অবৈধ বালু উত্তোলনের বিষয়ে বলেন, শষ্যের মধ্যে ভূত পালিয়ে থাকলে কি ভাবে ভূত তাড়াবেন। আমরাতো যেখানে যতটুকু বলার বলি। কিন্তু এরা সব ম্যানেজ করে এ কাজ করছে। তাই নদী ভাঙ্গন থামছেনা। আমার বাড়িও নদীর খুব কাছে চলে এসেছে। এব্যপারে জেলা প্রশাসকের পরিদর্শন করে দ্রুত প্রতিরোধে ব্যবস্থা নেয়া জরুরী হয়ে পরেছে।
বালু উত্তোলনকারি শ্রমিকদের সাথে কথা বলে জানাযায়, এ ব্যবসায় ৩ ধরনের নৌজান ও খনন যন্ত্র ব্যবহার কার হয়। নদীর তলদেশ থেকে বালু উত্তোলনের জন্য ড্রেজার। ড্রেজারের বালু নিয়ে যাবার জন্য নৌযান ব্লাঙ্কহেড ব্যবহার করা হয়। নৌযান থেকে পুকুর জলাশয় ও স্থাপনা ভড়াটের জন্য রয়েছে আরেকটি যন্ত্র। বালু তোলার ক্ষেত্রেও ব্যবসায়ীরা সামর্থ্য অনুযায়ি এ তিন ভাবে বিনিয়োগ করে থাকে। প্রতি বর্গফুট বালু উত্তোলন কর হয় ৫০ পয়সা। কিন্তু বিক্রি হচ্ছে ৫ থেকে ১০ টাকা। এভাবে প্রতি রাতে লাখ লাখ টাকার বালু উত্তোলন করা হলেও সরকারকে বিশাল অংকের রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে রাতারাতি আঙ্গুল ফুলে কলা গাছ হয়েছে এই সিন্ডিকেট।
এ বিষয়ে ঝালকাঠির লঞ্চঘাট এলাকার সমন্বয়কারি হক খলিফা জানান, আমি এই ব্যবসার সাথে এখন জড়িত নই। মোবাইলে বালু উত্তোলনের বিষয়ে কথা বলা যাবেনা। এদের নেট অনেক বড়। আপনাদেরতো জানার কথা। সামনা সামনি এ বিষয়ে দেখা করে কথা বলব। ঝালকাঠির ড্রেজার মালিক সুলতান হোসেন জানান, প্রশাসন আমাদের বাঁধা দেবে কেন। তাদের সরকারি কাজে যে বালু লাগে তা পাবে কোথায়। আমরাইতো তাদের এই বালু দিয়ে সহায়তা করি। এখন স্থান ভেদে নিচে ৫ টাকা উপরে ১০ টাকা প্রতি ফুট বিক্রি করছি। আমি ছাড়াও অনেকের ড্রেজার আছে। এতে খরচ আছে। তাই ফুট বেশি পরে। আমাদের এই কাজ বন্ধ করলে সব উন্নয়ন কাজ বন্ধ হয়ে যাবে। তবে আমরা ড্রেজারে বালু কাটি সুগন্ধা গাবখানের মোহনা থেকে।
এ প্রসঙ্গে ঝালকাঠি সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার অনুজা মন্ডল জানান, অবৈধ বালু উত্তোলনের বিষয়ে আমাদের অভিযান অব্যাহত থাকবে। কোন ভাবেই এদের ছাড় দেয়া হবেনা। ইতিপূর্বে একাধিক অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। তিনি সাংবাদিকদের কাছে অবৈধ বালু উত্তোলন প্রতিরোধে সহযোগীতা চেয়ে তথ্য দিয়ে সহায়তা করার আহ্বান জানান।

Please Share This Post in Your Social Media




More News Of This Category




Mobile : 01712387795

Email:dailydurjatra@gmail.com
টপ
কাঠালিয়ায় আইন বিষয়ে জনতার প্রশ্ন উত্তর পর্বে সমাধান দেন পুলিশ সুপার বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে নিহত রাকিবুলের লাশ আদালতের নির্দেশে উত্তোলন ঝালকাঠিতে আলোচনা সভায় বক্তারা: অন্তর্ভুক্তি মূলক টেকস‌ই ভবিষ্যৎ বিনির্মাণে বিকশিত নেতৃত্বে থাকবে প্রতিবন্ধী জনগন ঝালকাঠির নাগপাড়া গ্রামে বৃক্ষপ্রেমী ফরিদের ‘সুবজ সেবা পুষ্টি বাগান’ বাগেরহাট পৌরসভার ২২৭ কর্মচারীর ছয় মাস বেতন বন্ধে সড়ক অবরোধ বিক্ষোভ ঝালকাঠি জাতীয় সাংবাদিক সংস্থায় রেজাউল করিমের মতবিনিময় সিন্ডিকেট ভেঙে বাজার নিয়ন্ত্রণে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ দাবি ক্যাব ঝালকাঠির জামায়াতে ইসলামী রাষ্ট্র ক্ষমতায় এলে সকল মানুষকে সৃষ্টির সেরা জীব হিসেবে দেখবে -ডাঃ শফিকুর রহমান ঝালকাঠিতে অর্থনৈতিক শুমারি প্রশিক্ষণ উদ্বোধন করেন জেলা প্রশাসক কাঠালিয়ায় প্রেমিকার সাথে অভিমান করে প্রেমিকের বিষপান