-সোমা মুৎসুদ্দী,নন্দনকানন,চট্টগ্রাম।
দাও ফিরিয়ে সে অরণ্য লও এ নগর। কবির এই আকুতি অরণ্য সৃষ্টির জন্য।কারণ অরণ্য জীবনের মতোই প্রয়োজনীয়।প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষা এই বিশ্বকে বৈশ্বিক উষ্ণায়নের হাত থেকে বাঁচাতে বর্তমানে বৃক্ষরোপন জীব বাঁচানোর মতোই অপরিহার্য হয়ে পড়েছে।বিশ্বের উন্নত দেশগুলোর তুলনায় বাংলাদেশের বনভূমির পরিমাণ নৈরাশ্যজনক ভাবে কম হওয়ায় এই দেশ অনেক সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছ।এ-সব সমস্যা থেকে বাঁচার জন্য অধিক হারে সবাইকে বৃক্ষরোপন করতে হবে।দেশের প্রাকৃতিক বন ব্যাতীত বক্ষের উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে জনগণের সরাসরি অংশগ্রহণের মাধ্যমে বসতবাড়ি, রাস্তা,বাঁধ,খাস ও প্রাতিষ্ঠানিক জমিতে বিজ্ঞানসম্মত ভাবে ব্যাপকভিত্তিক গাছ লাগানো,পরিচর্যা ও ব্যবস্থাপনা প্রক্রিয়াকে বৃক্ষরোপন বলে।ক্রমহ্রাসমান এই পাকৃতিক বন আমাদের আর্থ সামাজিক সর্বোপরি প্রাকৃতিক পরিবেশের ক্ষেত্রে যে ভারসাম্যহীনতার সৃষ্টি করেছে তা থেকে উত্তরণের জন্য বেশি, বেশি বৃক্ষরোপন করা উচিত। পরিবেশ বিজ্ঞানীদের মতে কোনও দেশের কাম্য পরিবেশের জন্য সে দেশের মোট আয়তনের ২৫ভাগ বনভূমি থাকা প্রয়োজন।কিন্ত প্রয়োজনের তুলনায় আমাদের দেশে বনভূমি খুবই কম।এখানে ৫৫,০০০ বর্গমাইল এলাকায় মাত্র ১০,০০০ বর্গমাইল বনভূমি রয়েছে।যা দেশের আয়তনের মাত্র ১৬ ভাগ।এককালে এই দেশের বন মর্মরে কৃজিত হতো বিহগকণ্ঠ। এখানে ছিলো ফলবান বৃক্ষের বাগানে শ্যামলশোভা,ছিলো অরণ্যে বিপুল বৃক্ষরাজি। কিন্ত আধুনিক জীবন ও সভ্যতার করাল গ্রাসে সবুজ বাংলায় সেই শ্যামল সুন্দর রূপ আজ দেখা যায়না।বিভিন্ন প্রয়োজনে,অপ্রয়োজনে মানুষ প্রতিনিয়ত বৃক্ষ কাটছে।ক্রমবর্ধমান বিপুল জনসংখ্যার ঘরবাড়ি করার প্রয়োজনে বন কেটে উজার করা হচ্ছেে।ফসল উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে চাষাবাদ সম্প্রসারণ,জ্বালানির চাহিদা মেটানো,এবং বিভিন্ন নির্মাণ কাজে ব্যাবহার,আসবাবপত্র তৈরি ইত্যাদির জন্য প্রতিনিয়ত বৃক্ষ নিধন করা হচ্ছে।তাছাড়া ঝড়,বৃষ্টি, বন্যা প্রাকৃতিক নানা দূর্যোগ বেড়ে যাওয়ায় অধিক হারে বৃক্ষ বিনষ্ট হচ্ছে।ভূমিক্ষয়ে নষ্ট হচ্ছে বনভূমি।বন্যপ্রাণীর সংখ্যা কমে যাওয়ায় অনুপ্রবেশকারীদের কার্যাবলী বেড়ে গিয়ে বন ধ্বংস হচ্ছে।বন সংরক্ষণ আইনে ফাঁক থাকা ও যথাযথ প্রয়োগ না হওয়ায় বন ধ্বংস তথা বৃক্ষ হ্রাসের অন্যতম কারণ।বৃক্ষহীনরা যেকোনও দেশে ভয়াবহ অবস্থারন সৃষ্টি করে।বনভূমির অভাবে অনাবৃষ্টি, ঘূর্ণিঝড়,জলোচ্ছ্বাস দেখা দেয় বায়ুমণ্ডল ক্রমাগত উত্তপ্ত হয়ে প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট করে।দেশ আস্তে আস্তে মরুভূমিতে পরিণত হয়।দেশের নিম্নাঞ্চল তলিয়ে যাবার সম্ভাবনা দেখা দেয় দেশ বন্যপ্রাণী ও বন্যপাখী শূন্য হয়ে পড়ে।ফলে মানব জীবন নানা সংকটের সম্মুখীন হয়।বৃক্ষ নিধন ও কমে যাওয়ার ফলে ভূমির ক্ষয় বেড়ে যায় ও মাটির উর্বরতা কমতে থাকে।পাহাড়ি এলাকায় ভূমিধ্বস বৃদ্ধি, ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে চলে যাওয়া এবং নদীর পানি বৃদ্ধি ও গতি প্রবাহ পরিবর্তনে পলি পতন বৃদ্ধি ক্রমাগত বৃক্ষ। নিধনের ফল।পর্যাপ্ত গাছ না থাকলে বায়ু প্রবাহের অনিয়ন্ত্রিত গতির ফলে প্রাকৃতিক দূর্যোগের প্রকোপ বেড়ে যায়।বৃক্ষহ্রাসের ফলে বায়ুমণ্ডলে জলীয়বাষ্পের পরিমাণ বেড়ে আবহাওয়ার চরমভাবাপন্নতা বৃদ্ধি পায়।বৃক্ষ হ্রাস পরিবেশগত ভারসাম্য নষ্ট করে।ও গ্রীনহাউস প্রতিক্রিয়ার মতো বিভিন্ন মারাত্মক প্রাকৃতিক সমস্যা সৃষ্টি করে।বৃক্ষের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম বিভিন্ন জৈবিক ক্রিয়ার মাধ্যমে অনাদিকাল থেকে বৃক্ষরাজি প্রাকৃতিক ভারসাম্য এবং পরিবেশ দূষণ থেকে আমাদের রক্ষা করে আসছে।বৃক্ষ বাতাসের অতিরিক্ত কার্বনডাই অক্সাইড শোষণ করে এবং অক্সিজেন ত্যাগ করে।এতে বায়ুমন্ডলে অক্সিজেন ও কার্বনডাই অক্সাইডের ভারসাম্য রক্ষা পায়।বৃক্ষ শিকড়ের মাধ্যমে মাটিকে আটকে রেখে ভূমিক্ষয়,রোধ করতে সাহায্য করে।ভূ-গর্ভস্থ পানির মজুদ বৃদ্ধি করে এবং নদ নদীর প্রবাহ নিযন্ত্রন করে।তাছাড়া বৃক্ষ উচ্চতরঙ্গ বিশিষ্ট শব্দকে শোষণ করে শব্দ দূষণ থেকে পরিবেশকে রক্ষা করে।বন্য,প্রাণীদের আশ্রয় দেয়। কীটপতঙ্গ, পাখিদের আশ্রয় ও খাদ্যের যোগন দেয়।পরিবেশের বিরূপ প্রভাব থেকে বাঁচতে আমাদের বৃক্ষরোপন করতে হবে।সরকার বৃক্ষরোপনের জন্য নানা কর্মসূচি ঘোষণা করেছে।প্রতিটি পাড়ায়,,পাড়ায় জেলায় জেলায় গ্রাম শহর, পাহাড় সবখানে ফলজ বনজ বৃক্ষ ডোপন করতে হবে। মনে রাখতে হবে এই দেশ এই প্রকৃতি আমাদের একে বাঁচিয়ে রাখার দায়িত্ব সকলের। আগামী প্রজন্ম ও শিশুদের একটি সবুজ পৃথিবী উপহার দিতে বৃক্ষরোপনের বিকল্প নেই। -লেখক ও আবৃত্তিকার।