-শাহানাজ পারভীন।
সবারই তো থাকে ঘর
আমি এক যাযাবর
কখনো পাহারে যাই
কখনো বা ছুঁয়েছি সাগর।
জীবনের বেহাল দশা
ঘুরে বেড়ানোর নেশা
আমাকে ছোঁয় না কোনো
অট্টালিকার আশা।
করি প্রকৃতির সুধা পান
আমি শুধু মেহমান
চিরদিন থাকবে কে কোথা
মিথ্যা লোভ আর হিংসে অযথা।
ঘর নেই,বাড়ি নেই
নেই কোনো আপন ঠিকানা
আমি শুধু খুঁজে মরি মুক্তির পথ
যে পথের ঠিকানা অজানা।
তোমরা যারা আমায়
বলো ভবঘুরে বেহিসাবি
জীবনের হিসেব কি কষেছো তোমরা
পেয়েছো কী মুক্তির চাবি?
মোঃ রুহুলআমিন(রকি)
রিমঝিম পড়ছে বৃষ্টি
ঠান্ডা শীতল হাওয়ায়
মুহূর্তগুলো আরো সুন্দর হয়
যখন ভুনা খিচুড়ি খাওয়ায়।
বৃষ্টির পানিতে উঠোনে এক পাশে
জমেছে হালকা শ্যাওলা
খোকা খুকি মনের আনন্দে
শ্যাওলা কাঁদায় করছে খেলা।
ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি যখন
টিনের চালে পরে
টিনের চালে ঝমঝম শব্দে
মন প্রাণ যায় ভরে।
-আসাদ সরকার
নরসিংদী
হতভাগা চাষি
মুখেতে নেই হাসি। ।
আসলে দেশে খরা
ফসল ধরে মরা।
বর্ষা বৃষ্টির জলে
মাঠের ফসল তলে।
কষ্টে চাষি কাতর
বুকে বাঁধে পাথর।
– মমতা মজুমদার
কুমিল্লা
শিশুর মনে সুখের দোলা
করে আঁকিবুঁকি
চাঁদের হাসি ম্লান হয়ে যায়
হাসলে খোকাখুকি।
শিশুর মুখের হাসি যেন
মাতাল সুরের বাঁশি
মায়ের কোলটা আলো করে
ফোটে রাশি রাশি।
ফুলের মতো শিশু ঘুমায়
যেন সোনা পাখি
হাসলে ভীষণ লাগে ভালো
জুড়ায় দুটো আঁখি।
ঘরের শোভা বাড়ায় দ্বিগুণ
ছোট্ট শিশুর ছায়ায়
বাবা মায়ের চোখের মণি
থাকে স্নেহের মায়ায়।
-হানিফ রাজা
, ময়মনসিংহ।
ছেলে মেয়ে উভয় সমান
বিভেদ কেনো ভাই?
ছেলে মেয়ে বিধাতার দান
যার তুলনা নাই।
ছেলে কিংবা মেয়ে বলো
সন্তান তাদের কয়,
তবে কেন মেয়েরা আজ
অবহেলায় রয়?
ছেলের জন্ম হলে ঘরে
খুশির জোয়ার বয়,
মেয়ে হলে কিসের তরে
মুখটা কালো হয়?
হতে পারে ছেলেমেয়ের
ভিন্ন রকম কাজ,
মিলেমিশে কাজ করিলে
গড়ে সুখের রাজ।
মেয়ে বলে অবহেলা
কেউ করো না আর,
মেয়েরা যে জান্নাতের ফুল
ভেবেছো এক বার?
-হাফিজুর রহমান
, লালমনিরহাট
আজব জায়গার ফেসবুক
সহজে ছড়ায় গুজব,
সামলান কঠিন রাত জেগে
জেনে নেয়ার লোভ!
পকেটের টাকা খরচ করে
ভিউ বাড়ানোর খেলায়,
সত্য – মিথ্যার জগাখিচুড়ি
যতটা যে পারে গেলায়।
কেউ-কেউ ফায়দা লুটতে
কেউ আসে নিঃস্ব হতে,
এ অসুখের চিকিৎসা নেই
সারছেই না কোনমতে।
শাহজালাল সুজন
ক্লান্ত গোধূলি বিভৎস রাত
শুনশান হয়ে সব,
বুকের ভেতরে শব্দের ভাঁজ
উঠে যেন কলরব।
শান্তির খুঁজে বুকের পাশটা
নিভৃতে খুলেছি আজ,
কার্নিশ বেয়ে দমকা হাওয়া
উল্টো করেছে খাঁজ।
স্রোতধারা বয়ে আবিরের মতো
ঝলসানো হৃদ ভূম,
নিজ অজান্তে পুষ্পিত শব্দ
এক নিমিষেই গুম।
অঙ্কর গুলো হটাৎ জাগলো
প্রণন গাঁথুনি শোক,
মলিন দেহটা তৃপ্ততা ক্ষয়ে
অসার ঘোলাটে চোখ।
-মনিরুজ্জামান খান সোহাগ
সিরাজগঞ্জ
পত্রিকার পাতা জুড়ে ছাপা আজ
ধর্ষিতা নারীর ছবি,
মর্গে নাকি পড়ে আছে কোনো এক –
অচেনা নারী কবি।
কতোজনই তো ধর্ষিত হলো
পথে মাঠে ঘাটে,
কতো শত নারীর রক্ত লেগে আছে
লাশ কাটার খাটে।
টিভি স্ক্রীনে চোখ রেখে দেখি
হাড়গোড় ভাঙ্গা দেহ,
তরুণী যুবতী কর্মজীবী নারী
বাদ পড়ে না কেহ!
মাঝে মাঝে আমি রেডিওতে শুনি
ধর্ষণ বিরোধী গান,
আবার কখনো বা সেই রেডিওতে
ধর্ষিতা নারীর অপমান।
ধর্ষিতা নারী প্রতিনিয়তই হয়
ধর্ষকের হাতে খুন,
অর্থলোভী কোনো পুলিশের কারণে
আইনের মুখে চুন!
কতো না উকিল অর্থের দামে
কিনে নেয় কোর্ট-থানা,
তাইতো নারীদের অনিরাপদ যাত্রা
বাইরে বেরোনো মানা।
-শিমুল হোসেন
যুদ্ধের দামামা বাজে দেখো দেশে দেশে
বইছে রক্তের স্রোত আজি বিশ্বময়,
মিশছে মাটির গন্ধে তাজা রক্তফোঁটা
মানবতা কণ্ঠ রুদ্ধ, হচ্ছে সব ক্ষয়।
শিশুদের কণ্ঠে গান ফুরিয়েছে আগে
মায়ের চোখের জল হচ্ছে অশ্রুভার,
স্বপ্নেরা হারিয়ে গেছে ধুলো-বালি মাঝে
ভবিষ্যৎ আঁধারে মিশে হতাশা সবার।
জীবনের পথে পথে কত আশা ছিলো
কত ভালোবাসা ছিলো স্নেহেরও ঘরে,
কেঁড়ে নিলো সব দেশে দেশে যুদ্ধ এসে
শান্তি হারালো পৃথিবী মানুষের তরে।
ধ্বংস ছায়ায় দাঁড়িয়ে আছে বিশ্বজাতি
খুঁজছে একটু আলো বাঁচার আর্তনাদে,
তবু থামছে না যুদ্ধ, জ্বলছে আগুন
শান্তির বার্তা হারিয়ে অস্ত্রের ফাঁদে।
-আনজানা ডালিয়া
চট্টগ্রাম
ফিরতি পথে একগুচ্ছ কাশফুল এনো
ঝিমিয়ে পরার আগে,
কাশফুলের জীবন আমার মতোই
ঠিক আমার যৌথ জীবনের মতো
ক্ষণস্থায়ী,অবহেলিত জীবন।
মানুষ কাশবনে যাবে
নিজেকে রাঙাতে ছবি তুলবে
চিড়ে,ভেঙে ফুলগুলো গুচ্ছ বানাবে
তারপর ফুলগুলো শুধু ছবিতে থাকবে।
ক্ষনস্থায়ী জীবনের গল্পে মানুষ বেশ আগ্রহী
নিঃসঙ্গ,একা মানুষগুলোকে নিয়ে হা-হা,হি-হি।
– মোশাররফ হোসেন
ঝিনাইদহ
আজ তোমার মনে, আমার জন্য কোন প্রেম নেই-
তবে বিশ্বাস করো, আমাদেরও প্রেম হবে।
আমার চোখে সেদিন তুমি, তোমার পৃথিবী খুঁজে পাবে।
আমাদেরও একটা ছোট্ট সংসার হবে-
ঠিক যেন এক জোড়া ঘুঘু পাখির সংসার,
তোমাকে আগলে রাখবো,
ঝিনুক যেমন মুক্তাকে আগলে রাখে,
মেঘ যেমন বুকে ধরে রাখে নীল,
সাগর যেমন বুকে রাখে অথৈ জল,
ঠিক তেমনি আমার বুকটা হবে তোমার আশ্রয়স্থল।
বিশ্বাস করো, আমাদেরও একদিন প্রেম হবে-
তোমাকে সাঁজিয়ে রাখব, এই হৃদয়ের রঙে,
ভ্রমর কালো নয়ন সাঁজাবো, কালো মেঘের কালিতে,
চুল শুকাতে বিছিয়ে দেব, সাদা মেঘের ভেলা,
কৃষ্ণ বরণ অলক গুচ্ছে গুঁজে দিব, পাহাড়ি ফুল,
বিশ্বাস করো, একদিন আমাদেরও প্রেম হবে-
কারণ আমি বাদল, তুমি বৃষ্টি, প্রেম তো হবেই।
গ্রীষ্মের রুক্ষতা শেষে দেখা হবে বর্ষাতেই।
-সারমিন চৌধুরী
চট্টগ্রাম
এই হৃদয় ঘরে বসতবাড়ি গড়লে
স্বপ্ন আঁকলে চোখ জুড়ে,
প্রণয়ের করতলে বিশ্বাস জাগালে
কেন দাবদাহে যাচ্ছে পুড়ে?
মধ্যরাতে জাগিয়ে কত গল্প বুনতে
খুনসুটিতেই কাটতো প্রহর,
নিষ্পাপ চোখের চাহনিতে থাকতো
যেনো কথার আরসি নগর।
নিমিষেই ধুলোয় লুটিয়ে পালালে
আমার পরিশুদ্ধ আবেগটুকু,
ভাবিনি কভু বেখেয়ালি ভাবনায়
তুমিও যে হতে পারো দুমুখো।
মানুষের রুপে এসে নীলাভ করে
মৃত্যুর চেয়েও যন্ত্রণা দিলে,
একটাই প্রশ্ন করি অন্ধকারে বসে
মন ভেঙে কি আনন্দ পেলে?
যেখানেই থাকো সুখ যেন না কমে
বলে যায় রোজকার প্রার্থনায়,
আমার সমস্তটা জুড়ে রাখি তোমায়
হোকনা অভিমান বা যাতনায়।
-মহসিন আলম মুহিন
সিরাজগঞ্জ
মনের মাঝে সকাল সাঁঝে পাপ হয়েছে জমা,
মাফ করে দাও দয়াল প্রভু দাও করে দাও ক্ষমা।
মদদ করো দয়ার সাগর আল্লাহ কাদের গণী,
পাপী হলেও বান্দা তোমার দয়া পাবো জানি।
সঠিক পথে চালাও তুমি ওহে আমার খোদা,
দুই জাহানে শান্তি যাচি ওগো শান্তি দাতা।
তোমার দেওয়া আকাশ বাতাস দেহ জীবন দিয়া,
ভালো সবি করি যেন তোমার কৃপা নিয়া।
দ্বীন দুনিয়ার মালিক তুমি, তুমি জগৎ স্বামী,
তোমার বিধান চলবো মেনে হৃদয় দিবস-যামী।।
-ইমরান খান রাজ
ঢাকা
রক্ত হিম করা ভয়কে সাহসে রুপ দেয়
কারো চোখের ভাষা কেড়ে নেয়
সে যেন এক প্রেমিক।
চামড়ার রঙের পার্থক্য আর
কিছুটা উঁচু কিংবা নিচুর বিভেদকে সরিয়ে
বেছে নেয় প্রেমের পথ৷
না জানা ভবিষ্যৎ, আলো বা আঁধারের উৎকণ্ঠা
মিথ্যা শক্তির উপাসনা না করে
আলোকিত হয় প্রেমিক।
-এম এইচ মুকুল
, শেরপুর
হেমন্তের এপারে বসে ভাবে চাষি,
সোনার গয়না মোর ক্ষেতে রাশিরাশি।
কার্তিকের ঘর দোর করে পরিপাটি,
মুখ জুড়ে হাসি তার শতভাগ খাঁটি।
থেকে থেকে বলে যায় ভোর সমীরণে,
সোনার গয়না তোর খেলে মোর সনে।
হোক খাঁটি স্বপ্নটা রোদে পুড়ে পুড়ে,
ভেবে চাষি গান ধরে বেখেয়ালি সুরে।
অঘ্রাণ মিটিমিটি হাসে ওই পারে,
হলুদের শাড়ি পরে ডাকে বারে বারে।
সোনায় মোড়ানো তার সারা দেহখানি,
রোদ্দুরে ভেসে ওঠে সেই ঝলকানি।
ভরবে চাষির ঘর সোনাদানা দিয়ে,
গাঁও জুড়ে উল্লাস হেমন্ত নিয়ে।
-আসাদ সরকার
নরসিংদী
মধুর প্রেমে ভ্রমর পাগল
তোমার প্রেমে আমি,
তুমি আমার জীবন সাথী
হীরার চেয়ে দামি।
ফুলের মধু গোপন করে
থাকে যেমন অঙ্গে,
কথা দিলাম সুখে দুখে
থাকবো তোমার সঙ্গে,
মনের শিকল বাঁধার আগে
বেঁধেছিলাম ঘর,
এক শিকলে বাঁধা জীবন
কেমনে হবে পর?
-জাকির আলম
সিরাজগঞ্জ
তোমার জন্য এক মুঠো প্রেম ধৈঞ্চা লতার অধরে
তুমি আমার স্বপ্ন নীড় রাখি মনের কোটরে।
তোমার জন্য ইপ্সিত সুখ সাত সমুদ্রের ঝিনুকে
তুমি আমার অমিয় সুধা তৃষ্ণা মেটাই চুমুকে।
তোমার জন্য স্বর্গ প্রীতি সুখ তরঙ্গের সৈকতে
তুমি আমার সুখের তরী ভাসি নীলের শঙ্খতে।
তোমার জন্য চাঁদনি রাতের কাব্য প্রেমের গীতি
তুমি আমার হৃদয় তটে জোছনা ঝরা তিথি।
তোমার জন্য আলো-আঁধারি শিউলী ফুলের মুগ্ধতা
তুমি আমার মন কাননে রোজ সকালের স্নিগ্ধতা।
তোমার জন্য সব আয়োজন সাজায় প্রতি সন্ধ্যা
তুমি আমার মেঘবালিকা একটা রজনীগন্ধা।
-মহসিন আলম মুহিন
সিরাজগঞ্জ
সৃষ্টির সেরা শ্রেষ্ঠ জীব নাম যে তোমার মানুষ,
বিধাতার করুণায় সৃজন’ দিলেন তোমায় হুস।।
দিলেন তোমায় শিক্ষার জ্ঞান দিলেন জীবন বিধান,
সৎ কর্ম, ভালো-মন্দ বুঝতে দিলেন আল-কোরআন।।
নিজের জন্যে জীবন নয় পরের কিছু করো,
মানুষের সেবা মহৎ সেবা সবার চেয়ে বড়।।
মাতা-পিতার করবে সেবা সমাজ, জাতি, দেশের,
নিজের ভালো আসবে তাতে আপন হবে দশের।।
ছিন্নমূল-অসহায় যারা তাদের পাশে পাশে রবে,
প্রতিবেশির হক করবে আদায় বলবে ভালো সবে।।
যে পেশায় থাকো তুমি যত ধনী, জ্ঞানী-গুণী হও,
গরীর দুঃখীর পাশে থেকো অহংকারে না রও।।
ক্ষমতা, লোভ, ক্ষমতার জোড় না দেখাও কভু লোকে,
দ্বীন-দুঃখীর লাগি তোমার হৃদয় কাঁদে যেনো দেখে।।
রোগ সারাতে কাজ করো রুগীর থেকো সাথে,
নিজের করে মানুষের জন্য ভেবো দিন ও রাতে।।
অন্নহীনে তুমি অন্ন দিও বস্ত্রহীনে করো বস্ত্র দান,
লাভ কি বলো কৃপণ সেজে কমবে তাতে মান।।
ক্ষমতা পেয়ে তুমি অহংকারী হও না কভু যেন,
রক্তপাত, জবর-দখল ভালো নয় এ কথাটি মেনো।।
অট্টালিকায় বাস করে ভেবোনা নিজেকে অনেক দামী,
কুঁড়ে ঘরে বসত যাদের খবর রেখো সুখ পাবে তুমি।।
দু’লোকমা খেলে অনাহারীকে এক লোকমা দিও,
অধস্তন যারা তাদেরকে মায়া করে বুকে টেনে নিও।।
মানুষকে ভালোবাসলে মহান স্রষ্টা হবেন বড় খুশী,
মানুষ মানুষের জন্য হলে, শান্তি আসবে রাশি রাশি।
-জাহাঙ্গীর চৌধুরী
বনশ্রী
ফুলটা ছিল বেশ রঙচটা
দেখলো পাখি একটা।
ফুলের গায়ে দিল ঝাপটা
অবাক হলো ফুলটা।
পাখিটা গান গেয়ে গেয়ে
বলে ফুলকে গিয়ে।
প্রিয়া তুমি আমার হিয়ে
ফুলটা গেল নুয়ে।
পাখি বলে ছলাকলায়
এবার বসতে দাও গায়।
বোকা ফুলটা বুদ্ধি হারায়
পড়লো পাখির মায়ায়।
মেলে দিয়ে সকল পাপড়ি
মধু দিল ছাড়ি।
দুষ্ট পাখি পাখা নাড়ি
খেল মধুর হাঁড়ি।
মধু খাওয়ার ইতি টেনে
পাখি গেল বনে।
আসেনি আর ফুলের টানে
ফুলের কষ্ট মনে।
-জহিরুল হক বিদ্যুৎ
ঢাকা –
এক চিলতে রোদের মতো একটু হাসি
বদলে দেয় মন আকাশের বিরহী রং।
মরা নদীর অববাহিকায় কোন সুর নেই,
ওরা গান গায় এক পশলা বৃষ্টি মেখে।
জলহীন নদী আর জলহীন বৃক্ষ
নাম বদলে হয়ে ওঠে চর আর কাষ্ঠ,
এই পরিবর্তন কাউকে তেমন ভাবায় না!
প্রচ্ছদে আঁকা কিছু ছবি নিছক বিভ্রান্তি ছড়ায়
পটভূমিতে চোখ রাখলেই বোঝা যায়
ওখানে হিজল ফুল আর নদীর সখ্যতা বিবর্ণ।
হাসি ও ক্ষুধা কোনটার শক্তি বেশি?
প্রেম ও ঘৃণার মতো বিপরীত?
না কী জীবন বোধের মর্মে সমান্তরাল?
একটি নির্মল সহাস্যমুখ স্বপ্নে এসে উঁকি দেয়
অন্ধকারে ক্ষুধার দরজায় নক করে,
সে জানে শোষিত মানুষের স্বপ্নের ইতিকথা!
-শাহজালাল সুজন
পাগল যারা সদাই তারা
থাকে প্রভুর ধ্যানে,
সুস্থ লোকে নেশার শোকে
ভবের পাগল জ্ঞানে।
পাগল গুলো গায়ে ধূলো
পথের ধারে থাকে,
মানুষ পাগল হয়ে ছাগল
ঘুরে লোভের বাঁকে।
রয়না লোভে পাগল ক্ষোভে
অন্তর দৃষ্টি দিয়ে,
ধার ধারে না আগ বাড়ে না
যে যায় বলুক গিয়ে।
ভেজাল খেয়ে অন্তর বেয়ে
ঝরে যাদের কালো,
ধরার মাঝে পাগল সাঁজে
আঁধার ঘেরা আলো।
এই ধরাতে পেট ভরাতে
নকলের যায় বেলা,
বুঝে না কেউ রূপেতে ফেউ
পাগলেরই খেলা।
-মাহবুব-এ-খোদা
নাটোর
যুগ পেরিয়ে যাইনি ভুলে
আছো বুকের মাঝে,
স্মরণ করি তোমায় বাবা
সকাল-দুপুর-সাঁঝে।
বিছিয়ে দিয়ে মায়ার চাদর
করেছিলে বড়ো,
ছোটবেলায় তোমায় দেখে
হতাম জড়সড়ো।
কতোদিন যে কাঁধে নিয়ে
গিয়েছিলে হাঁটে,
নানারকম খাবার কিনে
ফিরে আসতে বাটে।
তুমি ছিলে চোখের মণি
বটবৃক্ষের ছায়া,
এইজীবনে পাইনি কারো
তোমার মতো মায়া।
মরণের পর কী অবস্থা
না জানি ওই ঘরে!
তোমার কথা মনে হলে
আজও অশ্রু ঝরে।
-এম,আলমগীর হোসেন
বাগেরহাট।
হঠাৎ ঘুর্ণি ডানা
দেশে দিল হানা,
মা বলে শোন ছানা
বাইরে যেতে মানা।
দুষ্টু পাখির ছানা
বের হলো নীড় ছেড়ে,
না শুনে মা’র মানা
পড়ল ঘূর্ণিঝড়ে।
সেই ছানাটি ফিরে
আর এলোনা নীড়ে,
না শুনে মা’র কথা
প্রাণ যে গেল উড়ে।
-কৌশল কর্মকার
ঠান্ডার মওসুমে কুয়াশার ঘনঘটা
যেন কুয়াশার চাদর,
হিমময় বায়ু বয়,চারপাশ ঠান্ডা রয়-
সূর্যটা হয় অনুদার।
কুহেলিকার আগমনে শৈত্য বিরাজমান
যেন ইগলুর টেরা,
ভোরের শেতাঙ্গ রূপ, বিহঙ্গ নিশ্চুপ-
ক্ষীণ প্রাণহীন ধরা।
দিনে দিনকরের কল্যাণে বসুমতী
যেন হয় অলকা
বলহীনা প্রাণীকুল,সূর্যকরের আকুল-
চায় দেহে ক্ষমতা।
দুর্গম রাত্রিতে পৃথিবীকে গ্রাস করে
যেন কুয়াশার আবছায়া,
মাতৃপ্রেমের নিদর্শন,নিত্য হয় প্রদর্শন-
জাগে নির্মমের মায়া।
এমন দিনে বাড়ে প্রাণীকুলের কষ্ট
যেন চারিদিকে হাহাকার
স্বার্থপর বিত্তবান,ইমারতে আবাসন-
দীনেরা খুঁজে আহার।
-মোশাররফ হোসেন
ঝিনাইদহ
নদীর জলে পাল তুলে
নৌকা চলে ঐ,
ভেসে চলে অদূর দেশে
মাঝি বলে হৈ।
হাতটি নেড়ে শাপলা ফুলে
মাঝি রে শুধায়,
কোথায় চলো ভর দুপুরে
তোমার বিরাম নাই?
অনেক দূরে যেতে হবে
অনেক কাজ বাকি,
মাঝি বলে তোমার কথায়
কেমনে বসে থাকি।
তোমার সাথে গল্প করলে
নৌকা যাবে ভেসে,
অনেক বিপদ হবে তখন
পিছিয়ে পড়ব শেষে।
জীবন চলার পথে রে ভাই
থামার সুযোগ নাই,
থেমে গেলে ভেসে যাব
রইবে না উপায়।
-নুশরাত রুমু
হেমন্ত দিন স্বপ্ন রঙিন
পাকা ধানের ঘ্রাণে
ঋতুর রাণী সবাই জানি
খুশি ছড়ায় প্রাণে।
কৃষাণ পাড়া কাজের সাড়া
নেই তো অবসর
এবার তবে বদল হবে
খড়ের চালার ঘর।
পিঠা পায়েস খেতে খায়েশ
নতুন ধানের চালে
রসুই ঘরে মায়া ভরে
মা যে আগুন জ্বালে।
ফলন হলো বেচবে ভালো
মনে খুশির ঝলক
টাকা পেলে গঞ্জে গেলে
কিনবে বধূর নোলক।
-নাদিয়া নওশাদ
মতলবপুর থানার অফিসার ইন চার্জ মইনুল ইসলাম ও তার স্ত্রী সাবেরার কোনও পুত্র সন্তান নেই।
পুত্র সন্তানের আশায় আশায় সাবেরা তিন কন্যা সন্তানের জন্ম দিলো। কন্যাদের নাম কাজরী, বিজরী ও মঞ্জুরী। বড় দুই মেয়ের জন্মের প্রায় আট বছর পর মঞ্জুরীর এই বিশাল ধরণীতে আগমন। এরইমধ্যে সাবেরার শরীর অনেকটা ভেঙে গিয়েছে। অদ্ভুত ব্যাপার,কোনোরকম লক্ষণ ছাড়াই মঞ্জুরী সাবেরার গর্ভে আসার পর ধীরে ধীরে ছোট্ট একটা টিউমার পাশাপাশি বড় আকার ধারণ করে। একসময় টিউমারটি এমন এক পর্যায়ে পৌঁছায় যে এখন আর কিছুই করার নেই।সেই টিউমার ক্যান্সারে পরিণত হয়। মইনুল ইসলাম সাহেবের থানার এক সহকর্মী অফিসার শরীফ আহমেদ ও তার স্ত্রী নিঃসন্তান দম্পতি ছিলো। এদিকে সাবেরার শরীর এতোই খারাপ হলো অবশেষে সাবেরা চলে গেলো ‘না ফেরার দেশে’। অসহায়ত্বের এমন পর্যায়ে শরীফ আহমেদ মঞ্জুরীকে দত্তক নেয়ার প্রস্তাব দিলো মইনুল ইসলামের কাছে।
সবদিক বিবেচনা করে প্রস্তাবে মন খারাপ হলেও রাজি হলো মইনুল ইসলাম ও তাঁর কন্যাদ্বয়।মঞ্জুরীর সব দায়িত্ব সাদরে গ্রহণ করলো আহমেদ দম্পতি। পরম স্নেহ,আদর-যত্নে তাদের কাছে বড় হতে লাগলো মঞ্জুরী। এখন মঞ্জুরীর বয়স আঠারো বছর। এই বয়সের অন্যান্য মেয়েদের মতো সেও যথেষ্ট আকর্ষণীয়! পাশের পাড়ার রাকিব খুব স্বাভাবিকভাবেই মঞ্জুরীকে পছন্দ করে। কলেজে যাওয়া-আসার পথে
দুজনের প্রায়শই দেখা-সাক্ষাৎ হয়। রাকিব খুব একটা পড়াশোনা করেনি। সোজা বাংলায় বাবা-মায়ের অলস,বাউন্ডুলে ছেলে। হঠাৎই আবেগের বশে একদিন রাকিব ও মঞ্জুরী বাড়ি থেকে পালিয়ে বিয়ে করে। এ ঘটনায় মঞ্জুরীর পালক অভিভাবকদ্বয় খুব কষ্ট পেলো। রাকিবের আয়-উপার্জন নেই। তার ওপর পাশেই বসবাস শুধু মুখচেনা এক মেয়েকে হুট করে বিয়ে করে বাড়িতে নিয়ে আসা সব মিলিয়েই এক প্রতিকূল পরিবেশের অবতার হয়। তাই শশুর ভিটেতে মঞ্জুরীকে উঠতে বসতে নানা গঞ্জনা সহ্য করতে হয়। তার ওপর ধীরে ধীরে রাকিবের অলসতা,হাতে টাকা পেলেই ওড়ানো,টাকার প্রতি লোভ মঞ্জুরীর কাছে স্বচ্ছ কাঁচের মতো স্পষ্ট হয়ে ওঠে। এরই মধ্যে বছর ঘুরতে না ঘুরতেই নিজদেহে ছোট্ট আরেকটি প্রাণের অস্তিত্ব অনুভব করে মঞ্জুরী। তার কোল আলো করে জন্ম নেয় অন্তিক। একদিন কাউকে কিছু না জানিয়ে স্ত্রী আর পুত্রের দায়িত্ব গ্রহণ থেকে পালাতে নিরুদ্দেশ হয়ে যায় রাকিব। এ ঘটনার জেরে মঞ্জুরী ও তার সন্তানকে বাড়ি থেকে বিতাড়িত করে তার শশুর-শাশুড়ী। ছোট্ট অন্তিককে নিয়ে অসহায় মঞ্জুরী তখন অনেক অনুরোধ করে এলাকার এক বয়স্ক মহিলা টেইলার মাস্টারের কাছ থেকে টেইলারিং শিখে।
অনেক কষ্ট করে পরিচিতদের জামা-কাপড় সেলাই করে মঞ্জুরী অন্তিককে পড়াশোনা করায়। একটা বাড়ি ভাড়া করে মা-ছেলে সুখে-দুঃখে মিলেমিশে ভালোই কাটছিল। অন্তিক এখন একটি কর্পোরেট সংস্থায় চাকরিরত। কিছুদিনের মধ্যেই অফিস সহকর্মী লুবনার সাথে অন্তিকের প্রণয় তারপর পরিণয়।
কিন্ত বড্ড আধুনিক মেয়ে লুবনা! স্বামীকে নিয়ে একান্তে থাকা তার চাই-ই। মঞ্জুরীর এখন বয়স হয়েছে। এখন আর আগের মতো কাজও করতে পারে না। তাই সংসার খরচ বাঁচিয়ে যা সঞ্চয় ছিল তা নিয়েই অবশেষে ‘প্রবীণ কল্যাণ সমিতি’ নামক বৃদ্ধাশ্রমে ঠাঁই মেলে তার। অবশ্য সমাজের উচ্চবিত্ত শ্রেণির ব্যাপক সহায়তায় বৃদ্ধাশ্রমে বয়স্ক মানুষদের অনেক যত্নে দেখভাল করা হয়। প্রকৃতপক্ষে বড়ই অদ্ভুত মানবজীবন! এ সমাজে নিজ সন্তানের সাংসারিক সুখের জন্য তার অবহেলা নিরুপায় হয়ে মেনে নিতে বৃদ্ধ বাবা-মা কে। কি ই বা পেলো মঞ্জুরী তার শেষজীবনে?এমন অনেক মঞ্জুরী কথন আমাদের এই সমাজে প্রতিনিয়তই লক্ষণীয়।