কামরুজ্জামান সুইট, ঝালকাঠিঃ-ঝালকাঠি-২ আসনের এমপি এলকাবাসি থেকে জনবিচ্ছিন্ন নেতা শহরের রোনালস রোডে আমির হোসেন আমুর বাড়িটি দেখে মনে হয় যেন পোড়া ভুতুড়ে বাড়ি। শুনসান নিরবতা বাড়িটির ভিতরে। যে বাড়িতে ছিলো নিছিদ্র নিরাপত্তা। ভিতরেও ছিলো রাত্রিকালীন পাহাড়ার ব্যবস্থা। যখন এলাকায় আসতেন তখন তার দলীয় নেতাকর্মীদের ভীড়ে এটি জমজমাট থাকত । সামনে থাকতো তার অনুসারী নেতা-কর্মীদের গাড়ি ও মটর সাইকেল । মাঝে মাঝে বাড়ির সামনের সড়কটি যান ও মানুষ চলাচলের জন্য বন্ধ করে দেয়া হতো। সেই বাড়িটিতে এখন শুনসান নিরবতা। জনগনের রোশানলে ক্ষোভের বহিপ্রকাশ অগ্নিকান্ডে বাড়িটি ক্ষত বিক্ষত। এখন দেখলে মনে হয় পোড়া কোন ভূতুরে বাড়ি। এ বাড়ি থেকে উদ্ধার করা হয়েছে কোটি কোটি অবৈধ টাকা। সুদৃশ্য বাড়ির ভবন দুটির ভেতরের পুরো অংশ প্রায় পুড়ে কালো হয়ে গেছে। এই বাড়ি নির্মানের পর এলাকার মানুষের সাথে কোন দিন যিনি মতবিনিময় বা তাদের কথা শুনতে একটা দিন ডাকেনি। মতবিনিময় হতো দলীয় নেতাকর্মী ও ভিআইপিদের সাথে। সেই আমুর বাড়ির দরজা জানালাও নেই। সাধারন মানুষের এ বাড়িরর আশেপাশে আসাও ছিল অপরাধ। তাই শুধু আগুন দিয়ে মানুষের আক্রোশের স্বাধ না মিটলে দরজা জানাল পর্যন্ত খুলে নিয়ে যায় তারা। জানাগেছে, গত ৫ আগস্ট আওয়ামীলীগ সরকারে পতনের পর এ অবস্থার অবতারনা হয়। ওই একই দিন আমু’র অনুসারী জেলা আওয়ামীলীগের সহসভাপতি ও ঝালকাঠি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান খান আরিফুর রহমানের বাড়িতেও অগ্নিসংযোগ করে বিক্ষুব্দ জনতা। এ সময় ভবনে থাকা সকল মালামাল লুট ও অগ্নি সংযোগ করে।িএকই দিন আমুর ঘনিষ্ট আরো দুজন কাউন্সিলরসহ অনেকের বাড়ি ভাংচুর করে আগুন জালিয়ে দেয়া হয়। ৫ আগস্টের পূর্ব পর্যন্ত দোর্দন্ড প্রতাপে ঝালকাঠি শাসন করা এই আওয়ামীলীগ নেতা
আমু’র বর্তমান অবস্থান সম্পর্কে জানে না কেউ। সরেজমিনে ঝালকাঠি উপজেলা সদরের ওই সব বাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে গিয়ে দেখাগেছে, পুরো বাড়ি ও প্রতিষ্ঠান পুড়ে কিছু ছাই পড়ে আছে। আর ওই সব ভবন কালো হয়ে রয়েছে। ঝালকাঠি সড়ক বিভাগের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘যত ধরনের ঠিকাদারি টেন্ডার, সব
ক্ষেত্রেই আমু’কে দিতে হতো নির্দিষ্ট পরিমাণে টাকা। ঠিকাদার নির্বাচন প্রশ্নেও তার সিদ্ধান্তই ছিল চূড়ান্ত। ই- টেন্ডার চালু হওয়ার পরও নানা কৌশলে টেন্ডার প্রক্রিয়া
নিয়ন্ত্রণ করতেন তিনি। কথা না শুনলে কেবল বদলি নয়, শারীরিক মানসিকভাবেও হতে হতো হেনস্তা।’ সড়ক বিভাগের মতো এলজিইডি, শিক্ষা প্রকৌশল দপ্তর, গণপূর্ত, থানা প্রকৌশলী এবং প্রকল্প বাস্তবায়ন বিভাগসহ সব ক্ষেত্রেই ছিল একই অবস্থা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঠিকাদার আওয়ামীলীগ নেতা বলেন, যে কোন কাজ পাওয়ার আগে আমু’র ভায়রা কিরণ ও তার শালিকা মেরী ও পরীকে দিতো হতো পার্সেনটেজ। কম দিলেই কাজ অন্য কোন নেতা বা ঠিকাদারকে দিয়ে দিতো। লুটপাট ও অগ্নি সংযোগের পরে সংসদ সদস্য (এমপি) আমির হোসেন আমুর বাসভবন থেকে বিদেশি মুদ্রাসহ প্রায় পাঁচ কোটি টাকা উদ্ধার করেছে সেনাবাহিনী ও পুলিশ। ৫আগস্ট দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে ঝালকাঠি শহরের রোনালস রোডে আমুর বাসা থেকে এই অর্থ উদ্ধার করা হয়। স্থানীয় সূত্রে জানাগেছে, শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও দেশত্যাগের খবর ছড়িয়ে পড়ার পর দুপুরে বিক্ষুদ্ধ লোকজন আমুর বাসভবনে ভাঙচুর চালিয়ে অগ্নিসংযোগ করে। ওই সময়ে যা পারছে হাতিয়ে নিছে। পরবর্তীতে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা কয়েক দফা চেষ্টা করে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। এরপর রাত ১২টার দিকে স্থানীয়রা ওই ভবনের তিনতলায় আবারও আগুন জ্বলতে দেখে ফায়ার সার্ভিসে খবর দেয়। ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা আগুন নেভানোর সময় কয়েকটি পোড়া লাগেজ থেকে টাকার বান্ডিল বেড়িয়ে আসে। এরপর তারা বিষয়টি জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারকে অবহিত করেন। পরবর্তীতে সেনাবাহিনী ও পুলিশ সদস্যরা টাকার লাগেজগুলো উদ্ধার করেন। তারা একটি লাগেজে অক্ষত কয়েক কোটি টাকা এবং অপর লাগেজ গুলো থেকে গণনা করে আংশিক পোড়া দুই কোটি ৭৭ লাখ টাকা উদ্ধার করেন। এ ছাড়া বিদেশী ডলার ও ইউরোসহ বিভিন্ন দেশের প্রায় এক কোটি টাকা মূল্যমানের মুদ্রা রয়েছে উদ্ধারকৃত অর্থের মধ্যে। ঝালকাঠি ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন মাস্টার মো. শফিকুল ইসলাম জানান, ভবনটির তৃতীয় তলার কক্ষে অনেকগুলো কম্বলে লাগা আগুন নেভানোর সময় কিছু টাকার বান্ডিল বেরিয়ে আসে। এর সঙ্গে কয়েকটি লাগেজও পাওয়া যায়। পরবর্তীতে বিষয়টি জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারকে অবহিত করা হয়। টাকাগুলো প্রশাসন জব্দ করে এবং সদর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরী করে রাখা হয়। সেই জমকালো বাড়িটি এখন শুনসান নিরবতা বিরাজ করছে। পোড়া বাড়িটিতে কেউ প্রবেশও করছে না। এ যেন পোড়া এক ভুতুরে বাড়িতে পরিণত হয়েছে। দুদিনের এই দুনিয়ায় কি হবে এভাবে দূর্নীতি আর লুটপাটের রাজনীতি করে। সবই রেখে যেতে হবে পরপারে। কথায় আছেনা আজকের রাজা কালকের ফকির। আরো ঘৃনার বিষয় হলো সাধারন মানুষের প্রাপ্য কম্বল পর্যন্ত না দিয়ে তাদের ন্যায্য প্রাপ্য থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে। তা সেই কম্বল শেষ পর্যন্ত আগুনে পুড়ে ছাই। আর সেই বঞ্চিদের অভিশাপে এলাকা ছাড়া আমু ও তার সাঙ্গপাঙ্গরা।