ভ্রাম্যমান প্রতিনিধিঃ পেশায় মৎস্যজীবী। মাছ ধরাসহ যখন যে কাজ পান তিনি তাই করেন। পাশাপাশি কৃষি কাজের প্রতিও আগ্রহ অনেক। বসবাসের ঘরটিও জরাজীর্ণ। উপার্জিত অর্থ দিয়ে সংসার পরিচালনার পাশাপাশি তিনি ফলদ বৃক্ষের সমাহার করেছেন নিজের পারিবারিক জমিতে। আলাদা ভাবে করেছেন বিভিন্ন ফলদ বৃক্ষে সমৃদ্ধ পুষ্টি বাগান। বাড়ির কাছাকাছি মসজিদ ও শিক্ষাঙ্গনে রোপণ করেছেন কয়েকশত গাছ। ফলদ এবং ঔষধী গাছ নিজে রোপণ ও দান করেই আত্মতৃপ্তি পান তিনি। তবে তার এমন ব্যতিক্রমী কাজ অনেকটাই পরিবারের অজান্তে করেন। এমন গুণি মানুষ সদর উপজেলার পোনাবালিয়া ইউনিয়নের নাগপাড়া গ্রামে সিকদার বাড়ির বাসিন্দা ফরিদ সিকদার। তাঁর এমন মহতি উদ্যোগকে এলাকাবাসী দৃষ্টান্ত হিসাবে দেখেন। সহজ-সরল প্রকৃতির এ মানুষটির বৃক্ষপ্রেম সবার কাছেই প্রশংসনীয়।
তার রোপণকৃত গাছের ফল বিক্রি না করে পাখির খাদ্যের জন্য গাছেই রেখে দেন। তাছাড়া এলাকাবাসীর মধ্যেও সৃজিত ফল বিতরণ করেন। যাতে দেশী ফলের চাহিদা পাখি ও মানুষ মেটাতে পারে সেই বৃহৎ চেষ্টা করছেন তিনি। তার পিতা মৃত. আবুয়াল সিকদারও ছিলেন দরিদ্র, তিনিও ছিলেন বৃক্ষ প্রেমি ও মানুষের সেবা করতেন। সেই আদর্শ থেকেই তার এমন অনুকরণীয় পদক্ষেপ পালন করছেন। তার পৈত্রিক জমিতে রয়েছে শতাধিক বাঁশ ঝাড় এবং আরো বেশ কিছু বনজ বৃক্ষ। যা ওই প্রত্যন্ত এলাকার মানুষের যাতায়াতের জন্য সাঁকো নির্মাণ, মৃত ব্যক্তির দাফনে এবং এলাকার মসজিদ ও মাদ্রাসায় খুটির কাজ, মাহফিলে বাঁশ-গাছ প্রদান করেন ফরিদ সিকদার।
শ্রমজীবী ফরিদ সিকদার (৫৫) পড়ালেখা তেমন করতে পারেননি। তবে তাকে স্বশিক্ষিতও বলা চলে। তিনি এক কন্যা ও একপুত্র সন্তানের জনক। ফলের চাহিদা মেটাতে তিনি আলাদা ৮কাঠা জমির উপর করেছেন “সুবজ সেবা পুষ্টি বাগান”। সেখানে রয়েছে আম, জাম, কাঠাল, লিচু, মাল্টা, বাতাবী, পেয়ারা, জামরুল, জলপাই, আমলকি, তাল, নারিকেল, খেজুরসহ নানাবিধ ফলদ গাছ।
স্বশিক্ষত ফরিদ সিকদার লিখেছেন “সাম্যবাদ, দানবের অবসান, অধিকার, কাঁদছে হাজারো মা, বাংলার পুলিশ, বাংলা স্বাধীন
হবে, রক্ত দিয়ে ক্রয় স্বাধীন, জেলে, মাঝি, শিক্ষক, বীর শহিদের কথা, মুগ্ধ, পতন”সহ ২০টিরও বেশি হৃদয় ছোঁয়া কবিতা।
যার মধ্যে সাম্যবাদ কবিতাটি এলাকার মানুষের হৃদয়ে বেশি সমাদৃত হয়েছে।
ফরিদ সিকদার জানান, বাবা দরিদ্র থাকলেও তিনি মানুষকে ভালোবাসতেন, মানুষের ভালোবাসাও পেতেন। বাবার আদর্শ অনুকরণেই এসব কাজের প্রেরণা পাওয়া। দরিদ্র হলেও তেমন লোভ নেই, মানসিক শান্তি প্রাপ্তির জায়গা থেকেই এসব কাজ করছি। আমার কাজকে কেউ কটাক্ষ করলে এলাকাবাসীই তার প্রতিবাদ করেন।
ছিলারিস খলিফা বাড়ি জামে মসজিদের সভাপতি মো. জসিম খলিফা, ইমাম মাওলানা মুহাম্মদ জাকির হোসেন, মুসল্লি মো. শহিদুল ইসলাম, মাসুদ হোসেন জানান, ফরিদ সিকদার দরিদ্র হলেও তিনি সাদা মনের মানুষ। ঝালকাঠি সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক) সভাপতি সত্যবান সেন গুপ্ত গোপাল জানান, স্বার্থপরতার এ যুগে এমন মানুষ মেলা কঠিন। প্রকৃত দেশপ্রেম এটাই। আর উপজেলা বন কর্মকর্তা আরিফুল ইসলাম, ফরিদ সিকদার পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করতে কাজ করে যাচ্ছেন। এটা প্রশংসনীয় উদ্যোগ।