মনির হোসেন, ঝালকাঠিঃ ঝালকাঠি সদর হাসপাতালের এ্যম্বুলেন্স চালক শাহাদাত হোসেনকে যে তত্ত্বাবধায়ক ডাঃ শামিম আহমেদ এতো দিন তার সরকারি বাসভবনে রেখে বিভিন্ন অবৈধ কাজ করিয়েছে সেই চালকই তাকে লাঞ্চিত করে তালাবদ্ধ করেছে। এমন ঘটনা ঘটেছে ১২ জানুয়ারি দুপুর দেড়টার দিকে।
এদিকে ঘটনার পর পুলিশকে দায়ি করে তত্ত্বাবধায়ক প্রশ্ন তুলেছেন শাহাদাতের কাছে চাবি থাকা অবস্থায় এ্যাস্বুলেন্সের ভিতরে ইয়াবা পাওয়া সত্বেও পুলিশ কেন সেদিন তাকে গ্রেফতার করেনি। ঐ ঘটনায় তিনি হতাশা ব্যক্ত করে সাংবাদিকদের কাছে বক্তব্য দেন। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমাদের কাছে আগেই প্রতিয়মান হয়েছে সে মাদক ব্যবসার সাথে জড়িত। কিন্তু যখন পুলিশ ইয়াবাসহ ধরেছে তখন বুঝে নিয়ে ছিলাম সে গ্রেফতার হবে। এরপর পুলিশ ছেড়ে দেয়ার পরে সমস্যা আরো ঘনিভূত হয়ে। তকে শাহাদাতকে কেন তার বাসভবনে এতোদিন রেখেছেন জানতে চাইলে তত্ত্ববধায়ক বলেন, রুমে সে অবৈধ ভাবে থাকে। এটা অফিসার্স কোয়াটার। এখানে সে থাকতে পারেনা। এখানে মাদক সংক্রান্ত কর্মকান্ড করে। প্রশ্ন উঠেছে এখন সে এসব জানার কথা স্বিকার করে এতো দিন কেন চুপ ছিলেন এবং পুলিশের উপর কেন দায় চাপানোর চেষ্টা করছেন।
ঘটনার পর খবর পেয়ে পুলিশ এসে শাহাদাতকে আটক করে। যদিও শাহাদাত বলছে তার সাথে একটি বিষয় নিয়ে মতের অমিল হওয়ায় ডা. শামিমকে বুঝানোর জন্য রুম আটকিয়ে কথা বলতে নিয়ে ছিলেন। এ ঘটনার মধ্য দিয়ে শেষ পর্যন্ত তত্ত্বাবধায়ক ও শাহাদাতের নাটকীয় সম্পর্কের অবসান হয়েছে এমনটাই অভিমত অনেকের। হাসপাতাল এলাকার বাসিন্দা ও স্বাস্থ্য বিভাগের সাথে সংশ্লিষ্ট অনেকের প্রশ্ন কি কারণে কিসের স্বার্থে তত্ত্বাবধায়ক এ্যাম্বুলেন্স চালককে তার বাস ভবনে এতোদিন রেখেছন। কেন চতুর্থ শ্রেনীর কর্মচারীদের নির্ধারিত কোয়াটারে থাকতে দেয়নি তত্ত্বাবধায়ক। গতকালকের ঘটনার পর এ নিয়ে ব্যাপক জল্পনা কল্পনার সৃষ্টি হয়েছে। আরো প্রশ্ন উঠেছে সংবাদপত্রে এতো দিন শাহাদাতের বিভিন্ন অপকর্ম নিয়ে সংবাদ প্রকাশ হলেও ত্ত্বাবধায়ক রহস্যজনক ভাবে নিরব ছিলেন। গত জুলাই মাসে শাহাদাতের প্রকল্প মেয়াদ শেষ হবার চিঠিসহ সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশিত হলেও এতো দিন কেন তার কাছ থেকে চাবি নেয়া হলোনা। তত্ত্বাবধায়কের সাথে এমন কি নিয়ে মতের অমিল হলো যে নিমিষেই দুজনার সাথে এই বিরোধের সৃষ্টি হলো। তাকে যখন পুলিশ গ্রেফতার করে নিয়ে যাচ্ছিল তখন সে চিৎকার কওে বলছিল তত্ত্বাবধায়কের অনেক দূর্নীতি আছে। যা আমি যানি। সময় আসুক আমি তা প্রকাশ করব।
গত জুন মাসে আউটসোর্সিং প্রকল্পের এই এ্যাম্বুলেন্স চালক শাহাদাতের চাকুরীর মেয়াদ শেষ হয়ে যায়। কিন্তু সে তত্ত্বাবধায়কের বিশ্বস্ত হওয়ায় বহাল তবিয়তে থেকে এ্যাম্বুলেন্স চালিয়ে যাচ্ছিলেন। এ নিয়ে প্রকল্প পরিচালকের প্রেরিত চিঠিসহ পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ হলেও কোন ব্যবস্থা নেয়নি তত্ত্বাবধায়ক। কারণ এই শাহাদাৎ সদর হাসপাতালে এ্যাম্বুলেন্স চালানোর পাশাপাশি মাদক ব্যবসার সাথে জড়িত ছিল। এসব কারণে বাধ্য হয়ে হটাৎ তত্ত্বাবধায়ক চালক শাহাদাৎকে কর্মস্থল থেকে অব্যাহতি দেয়ায় বেসামাল হয়ে তত্বাবধায়ক ডা: শামীম আহম্মেদের উপর চড়াও হয়। সে ডা: শামীমকে হাসপাতালের একটি কক্ষে আটকে হত্যার চেষ্টা করেছে বলে থানায় দেয়ংা অভিযোগে উল্লখ করা হয়। ঘটনার সময় কেউ যেনো তত্বাবধায়ককে বাঁচাতে না আসে সেজন্য ঐ কক্ষের পাশের গেইট তালাবদ্ধ করে দেয়। তবে তত্বাবধায়কের চিৎকারে শুনে কর্মকর্তা কর্মচারী এবং রোগীর লোকজন কেচি গেটের তালা ভেঙে ডা. শামীম আহম্মেকে উদ্ধার করে। এক পর্যায়ে ঘটনাস্থল থেকে শাহাদাত হোসেনকে পুলিশের হাতে তুলে দেয়া হয়। এ ঘটনায় সদর থানায় লিখিত অভিযোগপত্র দেয় ডা: শামীম।
অভিযোগ পত্রে হাসপাতাল তত্বাবধায়ক লিখেছেন ১০০ শয্যা বিশিষ্ট ঝালকাঠি সদর হাসপাতালের এ্যম্বুলেন্স ড্রাইভার শাহাদাত হোসেন ১২ জানুয়ারি দুপুর দেড়টায় আমার উপর হামলা ও হত্যা চেষ্টা চালায়। বিষয়টি টের পেয়ে আশপাশ উপস্থিত কর্মকর্তা কর্মচারীরা আমাকে উদ্ধার করেছে। লিখিত অভিযোগ পত্রে সদর হাসপাতালের এ্যম্বুলেন্স ড্রাইভার শাহাদাত হোসেন সম্পর্কে আরো উল্লেখ করেন যে, ইতিমধ্যে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর হতে গাড়ি চালক শাহাদাত হোসেনের চাকুরির মেয়াদ শেষ হয়েছে। চালক শাহাদাত এর কাছে এ্যম্বুলেন্সে রোগী পরিবহন বাবদ সরকারী ইউজার ফি জমা প্রদানের জন্য পত্র দেয়া হয়েছে। সে হাসপাতালের অফিসার্স কোয়ার্টারে অবৈধ ভাবে রুম দখল করে মাদক সেবন ও মাদকের কর্মকান্ড করেন। যাহা তাহার কর্মকান্ডে ও চলাফেরায় সন্দেহ হয়েছে। ইতিপূর্বে শাহাদাতের এ্যম্বুলেন্স থেকে ৩৫ পিচ ইয়াবা ট্যাবলেট উদ্ধার করেছে পুলিশ। ১১ জানুয়ারি গাড়ি চালক শাহাদাত আমাকে হুমকি প্রদান করেন। সে আমার সরকারী বাসভবনের সিসি ক্যামেরাটি নষ্ট করেছে যা তার আচরনে প্রমানিত হয়।' আশ্চর্যের বিষয় হলো তার লিখিত অভিযোগের ঘটনা অনেক আগেই সাংবাদিকরা পত্রিকায় প্রকাশ করলেও সখ্যতার কারণে কোন ব্যবস্থা না নিয়ে নিরব ভূমিকা পালন করে আসছিলেন। এ বিষয়ে এ্যাম্বুলেন্স চালক শাহাদাৎ হোসেন বলেন, আমাকে দিয়ে তত্ত্বাবধায়ক অনেক দূর্নীতি ও অবৈধ কাজ করিয়েছেন। যার স্বাক্ষি আমি নিজেই। কিন্তু তার সাথে মতোবিরোধ হওয়ায় আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করেছেন। তাই তাকে আমি একটি রুমে তালাবদ্ধ করে বুঝাতে চেয়ে ছিলাম। কি নিয়ে মতোবিরোধ তা তিনি বলেননি।
সদর থানার অফিসার ইনচার্জ মো. মনিরুজ্জামান বলেন, হাসপাতাল তত্বাবধায়ক ডা: শামীম আহম্মেদের দেয়া লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। অভিযোগে উল্লেখিত আসামী গাড়ি চালক শাহাদাতকে আটক করে থানায় আনা হয়েছে। এঘটনায় নিয়মিত মামলা গ্রহনের প্রক্রিয়া চলমান। মামলা রুজুর পরে আসামী শাহাদাতকে আদালতে পঠানো হবে।
উল্লেখ্য ইতিপূর্বে এই তত্ত্বাবধয়কের বিভিন্ন দূর্নীতি ও অনিয়মের সংবাদ প্রকাশ করায় এ্যাম্বুলেন্স চালক শাহাদাত হোসেনের উৎসাহে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে মানববন্ধন করেন তত্ত্বাবধায়ক। তার বিরুদ্ধে শুরু হওয়ায় দূর্নীতি দমন কমিশনের তদন্ত এখনো
চলমান। এছাড়াও তত্ত্বাবধায়কের বিরুদ্ধে হাসপাতাল কর্মকর্তা কর্মচারীদের দূর্নীতির অভিযোগ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তদন্তের সময় এই শাহাদাতকে দিয়ে তত্ত্বাবধায়কের পক্ষে স্বাক্ষ্য দিয়ে ছিলেন। এছাড়াও ঝালকাঠি প্রেসক্লাব, জাতীয় সাংবাদিক সংস্থা, টেলিভিশন সাংবাদিক সমিতিসহ ৫টি সাংবাদিক সংগঠন তত্ত্বাবধায়কের বিরুদ্ধে স্বাস্থ্য উপদেষ্টার কাছে স্বারকলিপি প্রদান করায় এই শাহাদাতকে দিয়ে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালিয়ে ছিলেন তত্ত্বাবধায়ক। তাই সম্প্রতি তত্ত্বাবধায়কের সাথে চালক শাহাদাতের বিরোধের সৃষ্টি হওয়ায় সাংবাদিক সমাজসহ সর্বমহল বিস্ময় প্রকাশ করেছে।