দূরযাত্রা রিপোর্টঃ ঝালকাঠির রাজাপুর উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নাসিম আকনের স্থগিত পদ প্রত্যাহারে ৩ নেতার জোর সুপারিশ নিয়ে দলের মধ্যে বিরুপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। সুপারিশের বিষয়টি জানাজানি হলে তাদের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
গত ৪ জানুয়ারি নাসিমের পক্ষে উপজেলা বিএনপি নেতৃবৃন্দ প্রত্যাহারের এই আবেদন করেন। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বরাবরে ঐ আবেদন করা হয়। এদিকে পদ ফিরে পেতে নাসিম মরিয়া হয়ে তদবির করতে দৌড়ঝাপ করেছেন। কারণ ২/১ দিনের মধ্যেই নাসিমের বিষয়ে দল থেকে চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসবে বলে দলীয় সূত্রে জানাযায়।
ইতিপূর্বে নাসিম আকনের নেতৃত্বে এলাকায় তার লোকজন দিয়ে ব্যাপক চাঁদাবাজি, দখল বাণিজ্য ও ভয়ভীত প্রদর্শনের খবর বিভিন্ন জাতীয় ও স্থানীয় পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। শুধু তাই নয়। কোন প্রতিকার না পেয়ে তার এসব অপকর্মের প্রতিবাদ স্বরুপ হয়রানী ও নির্যাতনকারিরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রতিকার দাবি করে। সব শেষ রাজাপুরের বাসিন্দা জাতীয় নাগরিক কমিটির নির্বাহী সদস্য আরিফুর রহমান তুহিনের বাড়ির সামনের খাল কাটার কাজ বন্ধ করে দেয় নাসিম।চাঁদা না দেয়ায় ঐ কাজ বন্ধ করায় এ ঘটনা জানিয়ে তুহিন ঝালকাঠি পুলিশ সুপারসহ বিএনপির উর্ধ্বতন নেতৃবৃন্দকে অবহিত করেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে নাসিমের নির্দেশে তার লোকজন তুহিনের পরিবারকে বাড়িতে জিম্মি করে ভয়ভীত দেখায়। তুহিন ও তার ভাইকে হুমকী দিয়ে নাসিমের অনুমতি ছাড়া কোন কাজ চলবেনা জানায় তারা। এ ঘটনায় জাতীয় নাগরিক কমিটি আনুষ্ঠানিক নিন্দা ও প্রতিবাদ জানায়। অবস্থা বেগতিক দেখে নাসিম নাগরিক কমিটি নেতা তুহিনের বাড়ি গিয়ে চা খেয়ে
বিষয়টি নিস্পত্তির কথা জানিয়ে ফেসবুকে ভিডিও দেন। এছাড়া ভূয়া মুক্তিযোদ্ধার বিরুদ্ধে তথ্য দেয়ায় এক জনের উপর হামলা করিয়ে তার পা ভেঙ্গে দেয়ার হুমকী দেয় নাসিম। তার বক্তব্যও ভাইরাল হয় সামাজিক মাধ্যমে। এরকম অসংখ্য ঘটনা নাসিম আকন ঘটিয়ে এলাকায় আতংক সৃষ্টি করেন। ইতিপূর্বে তাকে অবাঞ্চিত ঘোষনা করে জেলা শ্রমিক দল। কারণ জেলা শ্রমিক দলের সভাপতিকে নাসিমের পকেট কমিটি অনুমোদন করার চাপ দেয়। কিন্তু সভাপতি তা না করায় তাকে লাঞ্চিত করার প্রতিবাদে শ্রমিকদল অবাঞ্চিত করে নাসিমকে।
এই অবস্থায় তার বিরুদ্ধে অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পেয়ে ৮ জানুয়ারি কারণ দর্শানোর নোটিশ প্রদান করা হয়। কিন্তু জবাব সন্তোষজনক না হওয়ায় উপজেলা সম্পাদকের সদস্য পদ স্থগিত করেছে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি। নাসিম স্থগিতাদেশ চ্যালেঞ্জ করে আহ্বায়ক কমিটির বিরুদ্ধে ঝাড়ু মিছিল বিক্ষোভ করে। এরই ধারাবাহিকতায় ২ ফেব্রুয়ারি বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী নাসিমের সকল সদস্য পদ স্থগিত করেন। এখন পদ ফিরে পেতে নাসিম আকন মরিয়া। মোটা অংকের বিনিময়ে নেতাদের দিয়ে তদবির করানোর অভিযোগ উঠেছে।
এ অবস্থায় নাসিমের পদ ফিে র পেতে স্থগিতাদেশ প্রত্যাহারের জোড় সুপারিশ করে আলোচনা সমালোচনায় পরেছে ৩ কেন্দ্রীয় নেতা। এরা হলেন কেন্দ্রীয় বিএনপির ধর্ম সম্পাদক রফিকুল ইসলাম জামাল, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক (বরিশাল বিভাগ) আকন কুদ্দুসুর রহমান ও মাহবুবুল হক নান্নু। তাদের সুপারিশসহ পদ ফিরে পাবার আবেদন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বরাবরে দেয়া হয়েছে। বিষয়টি জানাজানি হলে দলের মধ্যে মারাত্মক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। এ প্রসঙ্গে ঝালকাঠি আহ্বায়ক কমিটির সদস্য সচিব এ্যাডভোকেট শাহাদাত হোসেন বলেন, সুপারিশ করা কেন্দ্রীয় ৩ নেতাই ঢাকায় থাকেন। তবে ধর্ম সম্পাদকের এলাকা রাজাপুর হওয়ায় তার দলীয় সব কিছু নাসিমের উপর নির্ভরশীল। সেই নাসিমের কৃতকর্মের জন্য স্থগিতাদেশ দেয়া হয়েছে। তাই নাসিমকে দায় থেকে বাঁচাতে তিনিসহ আরো ২ নেতা প্রভাবিত হয়ে জোড় সুপারিশ করেন। তারা আমাদের কাছে জানতে চাইতে পারতেন। এভাবে সুপারিশ করার আগে ভাবা উচিত ছিল।এদিকে নাসিমের কৃতকর্মের কোন তদন্ত ছাড়াই পদ ফিরিয়ে দিতে কিসের স্বার্থে জোড় সুপারিশ করা হলো তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক জেলা বিএনপির নেতাকর্মী জানান, বরিশাল বিভাগের সম্মেলন প্রস্তুত কমিটির দায়িত্ব দেয়া হয় ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল আউয়াল মিন্টুসহ কুদ্দুস ও নান্নুকে। কিন্তু বিতর্কীত নেতা নাসিমের
পক্ষে সুপারিশের ঘটনায় কুদ্দুস ও নান্নু তাদের নিরপেক্ষতা হারিয়েছে। তাই তাদের ঝালকাঠির সম্মেলন প্রস্তুত কিমিটিতে রাখা কতটা যুক্তি সঙ্গত হবে সেটা নীতি নির্ধারকরাই ভাল বুঝবে।
বিষয়টি নিয়ে সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক (বরিশাল বিভাগ) আকন কুদ্দুসুর রহমান বলেন, নলছিটি উপজেলা সাধারণ সম্পাদক সেলিমের বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ। তার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। নাসিমের পদ স্থগিত করেছে জেলা কমিটি। নাসিমের বিরুদ্ধেও অভিযোগ আছে। তাই আমরা কেন্দ্রে বলেছি নাসিমের বিষয়টি ভাল ভাবে দেখা উচিত। এই প্রক্রিয়ায় আমাদের সুপারিশ প্রয়োজন হয়না। তবে নাসিম আবেদন করেছে তার পদ ফিরে পেতে বলে আমি জানি।