কামরুজ্জামান সুইটঃ ঝালকাঠি ১২০ টাকার মুড়ি পাইকার বাজারে ১৬০ টাকা। রমজানে ইফতারের অন্যতম অনুষঙ্গ হলো মুড়ি। এ উপলক্ষে ঝালকাঠি জেলার নলছিটির হাতে ভাজা মুড়ির চাহিদা রয়েছে দেশব্যাপী। তাই ইফতারের চাহিদা মেটাতে দিন-রাত ব্যস্ত সময় পার করছেন উজেলার নলছিটি নাচনমহল মুড়িগ্রাম খ্যাত মুড়ি কারিগররা। ঘরে ঘরে চলছে যেন মুড়ি ভাজার উৎসব। এ গ্রামের ১০ থেকে ১২টি পরিবার প্রতিদিন মোট প্রায় এক হাজার কেজি মুড়ি উৎপাদন করে। হাতে তৈরি এখানকার মুড়ি স্বাদে অনন্য হওয়ায় যাচ্ছে ঢাকা, কুমিল্লা, খুলনা, ভোলাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায়। প্রাকৃতিক উপায়ে তৈরি হওয়ায় হাতে ভাজা এ মুড়ির চাহিদা দিনদিন বাড়ছে।
সরেজমিন নাচনমহলের কুড়ালিয়া গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, রমজান উপলক্ষে রান্নাঘরে ব্যস্ত সময় পার করছেন নানা বয়সী পুরুষ ও নারীরা। পুরুষ সদস্যরা এ মুড়ি বাজারজাতকরণের লক্ষ্যে বাড়ির উঠানে ওজন করে বস্তাভর্তি করছেন। প্রতিদিন ভোর থেকে শুরু হয় মুড়ি ভাজা, চলে মধ্য দুপুর পর্যন্ত। পরবর্তীকালে এসব মুড়ি পাঠিয়ে দেওয়া হয় পাইকারদের কাছে। গত ৩০ বছর ধরে চলছে এই কর্মযজ্ঞ। যে কারণে স্থানীয়ভাবে গ্রামটি মুড়িগ্রাম নামে পরিচিতি পেয়েছে। মালতি রানী রায় বলেন, বাবা মা গরিব ছিলো। স্বামী ১০টাকা বেতনে ঝালকাঠি শহরে বনিকের দোকানে কাজ করতেন। সেটা দিয়ে আমাদের সংসার চলতো না। অনেক মানুষ বুদ্ধি দিয়েছিলো মানুষের বাড়ি কাজ করতে কিন্তু আমি সেটা না করে স্বামীকে আর্থিকভাবে স্বচ্ছল করতে আমি নিজেই মুড়ি ভাজার কাজ শুরু করি। মনে বিভিন্ন এলাকা থেকে মানুষ চাল নিয়ে আসে। আমরা কেজি প্রতি ২০টাকা করে নিয়ে তাদের হাতে ভাজা মুড়ি সরবরাহ করে থাকি। কুড়ালিয়া গ্রামের রবিন্দনাথ রায় জানান, তাদের গ্রামে প্রায় ১২টি পরিবার বাণিজ্যিক ভাবে হাতে ভাজা মুড়ি উৎপাদন করে থাকে। একটি পরিবার প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৩২ থেকে ৫৫ কেজি মুড়ি উৎপাদন করেন। প্রতি কেজি মুড়ি পাইকারের কাছে বিক্রি হয় ১০০ থেকে ১১০ টাকায়। প্রতি মণ মুড়িতে লাভ হয় প্রায় ৫০০ টাকা। বাজারে এই মুড়ি বিক্রি হয় ১২০ থেকে ১৬০ টাকা কেজি।
ঝালকাঠি জেলার নলছিটি, রাজাপুর, কাঠালিয়া বিভিন্ন বাজারের মুড়ি ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, রমজানে হাতে ভাজা মুড়ির চাহিদা বেশ তুঙ্গে থাকে। বিশেষ করে নাচনমহলের কুড়ালিয়া গ্রামের মুড়ি বেশি খোঁজ করেন ক্রেতারা। ঝালকাঠি বিসিক জেলা কার্যালয়ের সম্প্রসারন কর্মকর্তা( ভারপ্রাপ্ত) মো: রিয়াজ উল হাসান বলেন, নলছিটির তিমির কাঠিতে আমাদের ঋণ সহায়তা দেয়া আছে। নাচনমহলের যদি কোন উদ্যোক্তা প্রশিক্ষন নিতে চায় তাহলে আমরা
তাদের প্রশিক্ষন এবং সরকারি নিয়ম অনুযায়ী ঋণ সহায়তা দিতে পারবো।
এ বিষয়ে নলছিটি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. নজরুল ইসলাম বলেন, কুড়ালিয়া গ্রামে মুড়ি উৎপাদনের বিষয়ে আমরা অবগত আছি। এখন পর্যন্ত তাদের পক্ষ থেকে স্থানীয় প্রশাসনের কাছে কোনো ধরনের সহযোগিতা চাওয়া হয়নি। তাদের চাহিদার কথা লিখিতভাবে আমাদের জানানো হলে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সাধ্যমতো চেষ্টা করা হবে।