দূরযাত্রা রিপোর্টঃ ঝালকাঠি জেলা বিএনপির কাউন্সিলকে কেন্দ্র করে রাজনীতির মেরুকরন জটিল হয়ে উঠছে।কাউন্সিলে শীর্ষ দুটি পদে কেন্দ্রীয় ২ নেতার প্রার্থিতা ঘোষনার পরেই পরিস্থিতি ঘোলাটে হয়। দিনক্ষণ ঠিক না হলেও শান্তিপূর্ণ কাউন্সিল অনুষ্ঠান নিয়ে সংশয়ে নেতাকর্মীরা।
জেলা বিএনপির সবশেষ সম্মেলন হয় ২০১৭ সালে। ১৫১ সদস্য বিশিষ্ট ঐ কমিটিতে মোস্তফা কামাল মন্টু ছিলেন সভাপতি।মনিরুল ইসলাম নুপুর ছিলেন সম্পাদক। সেই কমিটি ভেঙ্গে ২০২০ সালের নভেম্বরে গঠন করা হয় আহ্বায়ক কমিটি। এতে এ্যাডভোকেট সৈয়দ হোসেনকে আহ্বায়ক এবং এ্যাডভোকেট শাহাদাত হোসেন সদস্য সচিব হন। গত ফেব্রূয়ারিতে দলের নির্বাহী কমিটির সদস্য হায়দার আলী লেলিনকে জেলা বিএনপির কাউন্সিল প্রস্তুত কমিটির আহ্বায়ক করা হয়। ইতিমধ্যেই সদস্য সচিবের বিরুদ্ধে দুই দফায় অভিযোগ দেয়া হয়েছে কেন্দ্রে। অপর দিকে প্রার্থী হওয়া কেন্দ্রীয় দুই নেতার বিরুদ্ধেও ২/১ দিনের মধ্যেই পাল্টা অভিযোগ ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যনের কাছে পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে বলে একটি
সূত্র জানিয়েছে।
ঠিক যখন ঝালকাঠির জেলা বিএনপির কাউন্সিল অতি নিকটে তখনি দলের মাধ্যে একের পর এক ঘটনায় নতুন মাত্রা যোগ হচ্ছে। সম্প্রতি চাঁদাবাজী ও শৃংখলা ভঙ্গের অভিযোগে কাঠালিয়া উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নিজাম মীরবহরের পদ স্থগিত করা হয়েছে। তার বিষয়ে ব্যবস্থা না নিতে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল আউয়ার মিন্টুর অনুরোধ সত্বে পদ স্থগিত এবং জেলা বিএনপির আহ্বায়ক ও সদস্য সচিবের বিরুদ্ধে নতুন করে পুরান অভিযোগ দেয়ার ঘটনায় দলীয় হাওয়া গরম হয়ে উঠেছে। শুরু হয়েছে নতুন হিসেবে নিকেশ। তাই শেষ পর্যন্ত প্রায় ৭ বছর পর কাউন্সিল শান্তিপূর্ন হবে কিনা তা নিয়ে সংশয়ে নেতাকর্মীরা। তবে এসব ঘটনার প্রভাব পরলেও কাউন্সিল বাঁধাগ্রস্থ হবেনা এমনটাই মনে করছেন দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতৃবৃন্দ।
যে কোন সময় যে কোন দিন ঘোষনা হতে পারে কাউন্সিলের দিনক্ষণ। অপেক্ষা শুধু দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপার্সন তারেক জিয়ার সময় নির্ধারনের। কিন্তু তার আগেই বরিশাল বিভাগীয় সাংগঠনিক টিম প্রধান ও বিএনপির সহসভাপতি আব্দুল আউয়াল মিন্টুর একটি চিঠি নিয়ে বিতর্কের সৃষ্টি হয়। কাঠালিয়া উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নিজাম মীরবহরকে শোকজ করা হয় দলীয় শৃংখলা ভঙ্গ ও চাঁদাবাজির সাথে সম্পৃক্ত থাকার অভিযোগে। গত ৫ এপ্রিল জেলা বিএনপির আহ্বায়ক ও সদস্য সচিব স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে অভিযোগের বিষয়ে জবাব দিতে বলা হয়। এতে বলা হয় নিজাম মীরবহর কাঠালিয়ার আমুয়া ইউনিয়ন যুবদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সুমন খলিফার কাছে ৫ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। তা না দেয়ায় ৫ আগষ্টের পর আওয়ামীলীগের বিরুদ্ধে ২০২৪ সনের ২১ নভেম্বর দায়ের করা মামলায় সুমনকে আসামী করা হয়। এ ঘটনা জানিয়ে তারেক জিয়ার কাছে ৪ ডিসেম্বর অভিযোগ দেন। এছারাও সুমন খলিফা আমুয়া ইউপি চেয়ারম্যান প্রার্থী হবার আশংকায় তাকে মিথ্যা মামলায় আসামী করাসহ বিভিন্ন অভিযোগের কারণ দর্শাতে বলা হয় নিজামকে। এরপর চলতি বছরের ৭ এপ্রিল দলের ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু কারণ দর্শানোর জবাব প্রসঙ্গের বিষয়ে আহ্বায়ক ও সদস্য সচিবকে একটি চিঠি দেন। এতে তিনি সম্মেলন প্রস্তুত কমিটির তদন্ত ও অনুসন্ধান শেষ না হওয়া পর্যন্ত নিজামেরর বিরুদ্ধে কোন সাংগঠনিক ব্যবস্থা না নিতে বলেন। কিন্তু কেন্দ্রের সাথে কথা বলেই গত ২৩ এপ্রিল নিজাম মীরবহরের
দলীয় পদ স্থগিত করেন জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি। এতে উল্লেখ করা হয় নিজাম মীরবহরের বিরুদ্ধে উল্লেখিত অভিযোগের সত্যতা মিলেছে। এ বিষয়ে তার দেয়া জবাব সন্তোষজনক না হওয়ায় পদ স্থগিত করা হয়। তার অপতৎপরতার দায় দল নিবেনা। পদ স্থগিতের পরদিন কাঠালিয়ার বিভিন্ন ইউনিয়নে নেতাকর্মীরা আনন্দ মিছিল ও মিষ্টি বিতরণ করেছে। তাই ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল ্আউয়াল মিন্টুর চিঠিতে প্রমান হয় তাকে ভুল বুঝিয়ে জেলা বিএনপির সঠিক সিদ্ধান্তকে
বাঁধাগ্রস্থ করার চেষ্টা হয়ে ছিল। এমনটাই মনে করেন আমুয়া ইউনিয়ন যুবদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সুমন খলিফা। জেলা কাউন্সিলের আগে নিজাম মীর বহরের বিষয়ে এরকম সিদ্ধান্তে মাঠ পর্যায়ে কোন প্রভাবতো পরবেইনা বরং কাঠালিয়ার ভোটাররা সাচ্ছন্দে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবে বলে সুমন খলিফা জানান। এদিকে পদ স্থগিত চিঠির একই দিন পর ২৪ এপ্রিল চিঠির উপর ক্রস দেয়া মাহাবুবুল হক নান্নুর একটি অডিও রেকর্ড এবং চিঠির নিচে ‘বাড়াবাড়ি বেশি হচ্ছে’ লিখে পোষ্ট দেয়ার ঘটনায় পরিস্থিতি আরো উত্তপ্ত হয়। ঝালকাঠি-১ আসনের সম্ভাব্য প্রার্থী ও নিউইয়র্ক দক্ষিণ শাখার সভাপতি সেলিম রেজা মোবাইলে জানান, জেলা বিএনপির সম্মেলন উৎসবমুখর পরিবেশে এগিয়ে যাচ্ছিল। কিন্তু দুজন কেন্দ্রীয় নেতা হঠাৎ প্রার্থীতা ঘোষনা করার পর পরিবশে উত্তপ্ত হয়ে উঠে। তারা যখন
বুঝতে পারেন তাদের জয় সুনিশ্চি নয়, মাঠ পর্যায়ে তাদের গ্রহনযোগ্যতা নেই তখনই তারা তাদের কেন্দ্রীয় প্রভাব খাটানোর চেষ্টা চালাচ্ছেন। বিভিন্ন অভিযোগ তৈরী করিয়ে সম্মেলনকে বানচালের পায়তারা করছেন। এ প্রসঙ্গে জেলা বিএনপির সদস্য সচিব এ্যাভোকেট শাহাদাত হোসেন বলেন, আমি পদ স্থগিতের চিঠি দেয়ায় নান্নু ভাই আমাকে হুমকী দিয়েছে। এমনকি আমার বিরুদ্ধে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে এসেছে বলে জানতে পেরেছি। নিজাম মীরবহরের জবাব সন্তোষ জনক ছিলনা এবং জবাবের কোন প্রমান দাখিল করেনি। তাই কেন্দ্রে অবহিত করেই তার পদ স্থগিতের চিঠি দিয়েছি। এ চিঠির নিচে বেশি বাড়াবাড়ি হচ্ছে লিখে কেন্দ্রীয় নেতা নান্নু আমার হোয়টসএ্যাপ আইডিতে পাঠিয়েছে। আমার বিরুদ্ধে মিমাংসিত অভিযোগ করিয়ে সম্মেলন বাঁধাগ্রস্থ করার চেষ্টা হচ্ছে। যারা অভিযোগে স্বাক্ষর করেছে তারা সবাই বিগত ১৫ বছর ছিল নিস্ক্রিয়। এদের কাউন্সিলে ভোট নেই। তাই তারা চাছে ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করতে।
কাঠালিয়ার কেন্দ্রীয় সাবেক ছাত্র নেতা ও ঝালকাঠি-১ আসনের অপর সম্ভাব্য প্রার্থী গোলাম আজম সৈকত বলেন, নিজাম মীরবহরের পদ স্থগিতে ক্ষুদ্ধ হন নান্নু ভাই। তাই তিনি বিভাগীয় সম্মেলন প্রস্তুত কমিটির সদস্য এবং জেলা কাউন্সিল সম্পাদক প্রার্থি হয়েও সদস্য সচিবের বিরুদ্ধে স্বাক্ষর করা অভিযোগ আমার উপস্থিতিতে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দিয়ে যান। যেটা দুঃখজনক।
সর্বিক বিষরয় জানতে চাইলে কেন্দ্রীয় সহসাংগঠনিক সম্পাদক মাহাবুবল হক নান্নু জানান, সদস্য সচিব এ্যাডভোকেট শাহাদাত হোসেনের বিরুদ্ধে রাজাপুর, কাঠালিয়া, নলছিটি উপজেলার বর্তমান ও সাবেক নেতারা চেয়ারম্যান বরাবের অভিযোগ দিয়েছে। তিনি জেলা আ’লীগ সম্পাদক সাইফুল্লাহ পনিরের আইনজীবী হিসাবে কাজ করেছে বিগত দিনে। এরপর আওয়ামীলীগ নেতাকর্মীদের জামিন করিয়েছে। কাঠালিয়ার নিজাম মীরবহরের বিষয়ে তদন্ত শেষে রিপোর্ট দিতে বলেছেন আবদুল আউয়াল মিন্টু। কিন্তু তার নির্দেশ উপেক্ষা করে তদন্তের আগেই চিঠি দিয়ে নিজামের পদ স্থগিত করেছে শাহাদাত হোসেন। তাই আমি বলেছি এটা বেশি বাড়াবাড়ি হচ্ছে। আমিতো তাকে গালাগাল করিনি। সেতো ঐ চিঠি দিতে পারেনা। তাই সেই চিঠির উপর ক্রস দিতে বলেছি।
বর্তমান পরিস্থিতিতে আসন্ন কাউন্সিল সুষ্ঠ ভাবে হবে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য ও কাউন্সিল প্রস্তুত কমিটির আহ্বায়ক হায়দার আলী লেলিন বলেন, কদিনের ব্যবধানে কিছু ঘটনায় এবং ভুল বোঝাবুঝির কারণে বিষয় গুলো নিয়ে কিছু জটিলতা হয়েছে। আমাদের টিম প্রধান আব্দুল আউয়াল মিন্টুর তদন্ত করার আগেই কাঠালিয়ার নিজামের পদ স্থগিতের চিঠি কেন দেয়া হয়েছে সে বিষয়ে শাহাদাত সাহেবের কাছে ব্যাখ্যা চাওয়া হবে। এরপর মিন্টু ভাই সিদ্ধান্ত দিবেন। এছাড়া শাহাদাত সাহেবের বিরুদ্ধে উপজেলা নেতাদের অভিযোগের বিষয়টি নিয়েও পরিস্থিতি ঘোলাটে হয়েছে। এর প্রভাব পরবে কাউন্সিলে। তবে তারপরেও সব সমস্যার সমাধান করেই কাউন্সিল হবে শিগ্রই।