দূরযাত্রা রিপোর্টঃ বরিশাল ঝালকাঠি হয়ে পিরোজপুর থেকে খুলনা মহাসড়কটি ৪ লেনে উন্নীত করার প্রস্তাব বাস্তবায়ন হয়নি এক বছরেও। সময়ের পরিবর্তনে দক্ষিণাঞ্চলের সাথে ঢাকা খুলনার যোগাযোগ ব্যবস্থায় এটি অত্যন্ত জরুরী। দীর্ঘ দিনেও তা না হওয়ায় ঝালকাঠির বাসন্ডা নদীর উপর নড়বড়ে সেতুটি সাবচেয়ে ঝুঁকিতে। যে কোন সময় বড় দুর্ঘটনার আশঙ্কা করছে সড়ক বিভাগ।
৭ টন ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন ব্রীজটিতে প্রতিদিন উঠছে ৭০ থেকে ৮০ টন ওজনের যান। সড়ক বিভাগের নোটিশে অতিরিক্ত মালামাল নিয়ে সেতু পারাপারে নিষেধের তোয়াক্কা নেই। এ অবস্থায় ৪ লেন সড়ক নির্মানের প্রস্তাবনা বাস্তবায়নে বিলম্ব হওয়ায় সড়ক বিভাগের গলার কাটা হয়ে দাড়িয়েছে সেতুটি।
সুত্রে জানায়, বরিশাল খুলনা মহাসড়কের বরিশাল থেকে ঝালকাঠি হয়ে পিরোজপুর পর্যন্ত ৪ লেন সড়ক অত্যন্ত জরুরী। এতে এক দিকে বাসন্ডা নদীর সেতুতে যেমনি যানবহনের চাপ কমবে তেমনি এই তিন জেলার সড়ক পথে যান জটের নিরসন হবে। বিশেষ করে বরিশালের রুপাতলী এলাকা, ঝালকাঠির পেট্রোল পাম্প মোড়, কলেজ মোড়, রাজাপুরের বাগড়ি এলাকা, পিরোজপুরের বেকু টিয়া, পুরাতন বাস স্ট্যান্ড, ঢাকা বাস স্ট্যান্ড স্পটে যানজট লেগেই থাকে। সড়ক নির্মানের সাথে ঝুঁকিপূর্ণ বাসন্ডা সেতু স্পটে তৈরী হবে ৪ লেনের নতুন আরসিসি সেতু। এই বিষয়ে ঢাকা বিআইডব্লিউটিএ এর সহকারি পরিচালক আব্দুস ছালাম জানান, ৪ লেন সড়ক ও সেতু নির্মান প্রকল্পের আওতায় বাসন্ডা সেতুটির উচ্চতা প্রথমে ১২.২ মিটার নির্ধারণ করা হয়। পরবর্তীতে উচ্চতা কমিয়ে ৭.৬২ মিটার চুড়ান্ত করা হয়েছে। এখন বাকি কাজ বাস্তবায়নের দায়িত্ব সড়ক বিভাগের।
সড়ক বিভাগ সুত্রে জানা যায়, দক্ষিনাঞ্চালের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এই রুটের যান জট নিরসন এবং বাসন্ডা নদীর উপর নতুন সেতু নির্মানের জন্য এই ৪ লেন সড়ক ও ব্রীজ নির্মান প্রকল্পের প্রস্তাবনা দেয়া হয়েছে। এই প্রকল্প বাস্তবায়নে ভূমি অধিগ্রহনের সমিক্ষা চলছে। তবে কবে নাগাদ এই প্রকল্পের কাজ শুরু হতে পারে এমন
তথ্য জানাতে পারেনি কোনো সূত্রই। তাই প্রকল্পটির ভবিষ্যত অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। এ অবস্থায় ঝুকিপূর্ণ বাসন্ডা সেতুতে বড় ধরনের দূর্ঘটনার আশঙ্কা বেড়েই চলছে। তাই প্রকল্পটির দ্রুত বাস্তবায়নের পাশাপাশি জনসাধারন এবং যান চলাচলে নিরাপত্তার স্বার্থে ভ্র্যাম্যমান আদালতের অভিযান পরিচালনা করা দরকার।
বিষেজ্ঞদের অভিমত ৭ টনের বেশি অতিরিক্ত মালামাল বহনকারী যানবাহন যাতে সেতুতে উঠতে না পারে সেইজন্য আগেই বড় অংকের জরিমানা করা দরকার। একবার জরিমানা করা হলে দ্বিতীয় বার অতিরিক্ত বোঝাই করা কোনো যান বাহন উঠবে না। এতে একদিকে বড় ধরনের দুর্ঘটনা থেকে রেহাই পাওয়া যাবে অন্যদিকে সরকারী কোষাগারে জমা হবে বিপুল পরিমান রাজস্ব। সতর্ক হবে এই রুটে চলাচলকারী ভারী যানবাহন চালকরা। খুলনা থেকে ঝালকাঠি নিয়ে আসা আলু বোঝাই ট্রাকের চালক সাদ্দাম হোসেন জানান, তার ৮ টন ট্রাকে ২০ টন চাল নিয়ে সেতুটি পার হয়ে ঝালকাঠি প্রবেশ করে। বাসন্ডা সেতুটি ঝুঁকিপূর্ণ জেনেও এটি অতিক্রম করেন। কারণ খুলনা থেকে গৌরনদী হয়ে ঝালকাঠিতে আসতে ১৬৫ কিলোমিটার পথ বেশি ঘুরতে হয়। অথচ সরাসরি খুলনা থেকে ঝালকাঠি সড়ক পথের দূরত্ব ৮০ কিলোমিটার। ব্রীজের নীচে থাকা বাসন্ডা এলাকার বাসিন্দা হারিস সিকদার বলেন, প্রায়ই ভারি যানবহন চলাচলের সময় সেতুটি দুলতে থাকে। সেতুর মাঝের প্লেট দেবে যায়। অতিরিক্ত ওজনের কারণে অনেক সময় জোড়াতালি দেয়া প্লেট ছুটে যাওয়ায় লাল নিশানা দেয়া হয়। ব্রীজটির শব্দে এলকার
বাসিন্দারা আতংকে থাকে সবসময়।
বাসন্ডা সেতু নিয়ে ঝালকাঠি পুলিশ ফাড়ির ট্রাফিক পরিদর্শক ওমর ফারুক বলেন, এটি খুবই ঝুকিপূর্ণ। যে কোন সময় দূর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে জেনেও অতিরিক্ত ভারী যানবহন চলাচল করছে। তবে সেতুটিতে ৭ টনের অতিরিক্ত মালামাল বোঝাই পরিবহন আটকাতে পারছিনা কারণ পরিমাপক যন্ত্র নেই। যা সড়ক বিভাগের দায়িত্বে বসানো থাকলে সেতুটিতে উঠার আগে আটকানো সম্ভব। সেটি না থাকায় ওজনের মামলা করা সম্ভব হচ্ছেনা। তারপরেও আমরা সেতুটির নড়বড়ে অবস্থার কারণে যতটা সম্ভব সতর্ক ব্যবস্থা নিচ্ছি।
এ ব্যাপারে ঝালকাঠি সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী শাহারীয়ার শরীফ খান বলেন, বাসন্ড নদীর উপর নির্মিত ব্রীজটি আমাদের জন্য গলার কাঁটা হয়ে দাড়িয়েছে। কারন নতুন ব্রীজ নির্মানের জন্য ডিজাইন করে পাঠানো হয়েছে। সংশ্লিষ্ট টিম এ বিষয়ে কাজ করছে। অপরদিকে বরিশাল খুলনা মহাসড়কের ৪ লেনের সড় নির্মানের প্রস্তাবনা দেয়ার পর ভূমি অধিগ্রহনের সমিক্ষা চলছে। এ অবস্থায় জোরাতালি দিয়ে ঝুকিপূর্ন এই সেতুটি চলাচলের উপযোগী করে রাখতে আমরা সতর্ক আছি। কিন্তু এর জন্য আলাদা কোনো বরাদ্ধ না থাকায় মেরামত কার্যক্রম পরিচালনা করতে বগে পেতে হচ্ছে। দূর্ঘটনা এড়াে ত সড়ক বিভাগের পক্ষ থেকে ব্রীজে ৭
টনের বেশি ওজনের যান চলাচল নিষেধ জানিয়ে নোটিশ দেওয়া হয়েছে। অতিরিক্ত যানচলাচল রোধে ভ্যাম্যমান আদালত পরিচালনা করা যেতে পারে।