শাহীন আলম, ঝালকাঠিঃ কাজ শেষ হবার আগেই চাটুকারিতার জন্য ২০২৩ সালের ১৭ অক্টোবর সাবেক এমপি আমুকে দিয়ে ৯ তলা ভবনের হাসপাতালটি উদ্বোধন করিয়েছে বর্তমান তত্ত্বাবধায়ক। তাই ঝালকাঠির ১৫০ শয্যার হাসপাতাল উদ্বোধনের প্রায় দেড় বছর পেরিয়ে গেলেও এখনো চিকিৎসা কার্যক্রম শুরু হয়নি অবকাঠামোগত নির্মাণ কাজ শেষ হলেও এখনো ভবনের লিফট ও আরো কিছু অসমাপ্ত কাজ বাকি থাকায় হাসপাতালটি অচল অবস্থায় পড়ে আছে। এছাড়াও
পর্যাপ্ত জনবল ও চিকিৎসা সরঞ্জামের অভাবতো আছেই। এতে চিকিৎসা সেবার জন্য আসা স্থানীয়রা চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন।
ঝালকাঠি সদর হাসপাতালটি প্রথমে ১৯৮৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় এবং ২০০৩ সালে এটি ১০০ শয্যায় উন্নীত করা হয়। ২০১৮ সালে প্রায় ৭০ কোটি টাকা ব্যয়ে ২৫০ শয্যার একটি আধুনিক ৯ তলা ভবন নির্মাণের কাজ শুরু হয়। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নির্মাণকাজ শেষ করার লক্ষ্য থাকলেও তা সম্ভব হয়নি। কয়েক দফা সময় বাড়িয়েও কাজ শেষ না হওয়ায় গত বছরের অক্টোবরে তড়িঘড়ি করে ভবনটি আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হয়। তবে, উদ্বোধনের পর প্রায় বছর পার হলেও এখনো রোগীদের জন্য ভবনটি উন্মুক্ত করা হয়নি।
নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে ভবন হস্তান্তরের জন্য চিঠি পাঠালেও হাসপাতাল এখনো সেটি বুঝে নেয়নি। কারণ হিসেবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, ভবনের কিছু গুরুত্বপূর্ণ কাজ এখনো অসম্পূর্ণ রয়ে গেছে। বিশেষ করে লিফট স্থাপন না হওয়ায় ভবনটি ব্যবহার করা সম্ভব হচ্ছে না।
হাসপাতাল হিসেবে কার্যক্রম চালু করতে প্রয়োজনীয় জনবল ও চিকিৎসা সরঞ্জামও এখনো বরাদ্দ পায়নি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। ফলে পুরনো ১০০ শয্যার হাসপাতালেই অতিরিক্ত রোগীর চাপ সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছেন চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা। ঝালকাঠি জেলায় প্রায় ৮ লাখ মানুষের বসবাস, যেখানে প্রতিদিন সদর হাসপাতালে ৮০০-র বেশি রোগী আসেন। ছোট পরিসরে এত রোগীর চিকিৎসা দেওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে।
ঝালকাঠি সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল কর্মকর্তা (আরএমও) ডা. মেহেদী হাসান সানি বলেন, নতুন ভবনের কাজ পুরোপুরি শেষ না হওয়ায় সেটি এখনো ব্যবহার করা যাচ্ছে না। এতে রোগীদের যেমন দুর্ভোগ হচ্ছে, তেমনি আমাদেরও চিকিৎসা সেবা দিতে সমস্যা হচ্ছে। নতুন ভবন চালু হলে রোগীদের চাপ সামাল দেওয়া অনেক সহজ হবে। হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. শামীম আহম্মেদ বলেন, ১৫০ শয্যার হাসপাতাল চালুর জন্য প্রয়োজনীয় জনবল ও চিকিৎসা সরঞ্জাম চেয়ে আমরা মন্ত্রণালয়ে চাহিদাপত্র পাঠিয়েছি। কিন্তু এখনো বরাদ্দ পাওয়া যায়নি। বরাদ্দ পেলে দ্রুত কার্যক্রম শুরু করা হবে।
এ বিষয়ে ঝালকাঠির সিভিল সার্জন ডা. এইচ. এম. জহিরুল ইসলাম বলেন, ১৫০ শয্যার হাসপাতালটি চালু হলে জেলার সাধারণ মানুষের চিকিৎসা সেবায় এক যুগান্তকারী পরিবর্তন আসবে। আমরা চাই যত দ্রুত সম্ভব হাসপাতালের কার্যক্রম শুরু হোক। তবে ভবনটির নির্মাণকাজ শেষ না হওয়া এবং প্রয়োজনীয় জনবল ও সরঞ্জামের অভাবে সেটি সম্ভব হচ্ছে না। আমরা বারবার সংশ্লিষ্ট দপ্তরের সঙ্গে যোগাযোগ করছি, আশা করছি শিগগিরই সমস্যার সমাধান হবে। নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি মো. আককাস সিকদার বলেন, স্থানীয় জনগণ চরম চিকিৎসা সংকটে ভুগছে, কারণ প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সেবা না থাকায় তাদের বরিশাল ও ঢাকায় যেতে বাধ্য হতে হচ্ছে। এতে সময় ও অর্থের অপচয় হচ্ছে, পাশাপাশি অনেকের জন্য ব্যয়বহুল চিকিৎসা গ্রহণ করা অসম্ভব হয়ে পড়েছে। তিনি বলেন, এই সংকট নিরসনে যত দ্রুত সম্ভব ঝালকাঠির ১৫০ শয্যা হাসপাতালের কার্যক্রম শুরু করা জরুরি। তাই, সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, অবিলম্বে প্রয়োজনীয় জনবল ও সরঞ্জামের ব্যবস্থা করে হাসপাতালটি চালু করতে হবে, যাতে সাধারণ মানুষ দ্রুত ও স্বল্পব্যয়ে চিকিৎসা সেবা পেতে পারে।