দূরযাত্রা রিপোর্ট ঃ ঝালকাঠিতে ঘূর্ণিঝড় মিধিলির প্রভাবে জেলা প্রশাসনের পূর্ব সতর্কতায় তেমন কোন ক্ষতি না হলেও বিদ্যূৎ বিচ্ছিন্ন ছিল ৩২ ঘন্টা। শনিবার বিকেল ৫ টার দিকে কয়েকটি ফিডারে বিদ্যুৎ সরবরাহ চালু হলেও তবে সব ফিডার চালু করা সম্ভব হয়নি। বিদ্যুৎ না পাওয়ায় মোবাইল কম্পিউটার জেনারেটর চালু করা সম্ভব হয়নি। পানি সরবরাহ বন্ধ ছিল।
মিধিলির প্রভাবে ক্ষয় ক্ষতি কমাতে জেলা প্রশাসনের সতর্ক অবস্থা থাকলেও প্রতি বারের ন্যায় এবারো বিদ্যুৎ বিভাগের ছিলনা পূর্ব প্রস্তুতি। আবহাওয়া দপ্তরের আগাম খবর পেয়েও ৩৩ কেভি লাইনের ঝুকিপূর্ণ গাছপালা কাটার কোন উদ্যোগ নেয়া হয়নি। অথচ রক্ষণাবেক্ষনের নামে প্রতি বছর লাখ লাখ টাকা এলেও তার সঠিক প্রয়োগ নেই। শহরে মাইকিং করে লাইন রক্ষণাবেক্ষণের জন্য এ বরাদ্দ খরচ দেখানো হয়। কিন্তু ৩৩ কেভি লাইনের রক্ষণাবেক্ষণ করে বরাদ্দের সঠিক প্রয়োগ হলে প্রত্যেক ঝড়ো হওয়া বা ঘূর্ণিঝড়ের আগের দিন থেকে অনির্দিষ্ট সময়ের জন্য ঝালকাঠি ওজোপাডিকোর হাজার হাজার গ্রাহকদের চরম দূর্ভোগে পরতে হয়না।
মিধিলার প্রভাবে জানমালের ক্ষতি কমাতে এবং জনসাধারনকে সচেতন করতে ঝালকাঠি জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে জেলা দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটি এক জরুরী সভার আয়োজন করে। জেলা প্রশাসকের সম্মলেন কক্ষে গত ১৬ নভম্বের রাত ৮ টায় এ সভায় সভাপতত্বি করনে জলো প্রশাসক ফারাহ্ গুল নিঝুম। এ সময় তিনি জানান, ঘূর্ণিঝড় মিধিলির কারণে জানমালরে ক্ষতি কমাতে জেলা প্রশাসন সব ধরণরে প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে। এতে বিশেষ অতিথি পুলিশ সুপার আফরুজুল হক টুটুল বলনে, ঘূর্ণিঝড় মিধিলির প্রভাবে আমাদের সর্তক থাকতে হরে। যাতে ক্ষয়ক্ষতি কম হয়।
ঘুর্নিঝড় মিধিলির প্রভাবে উপকূলীয় জেলা ঝালকাঠিতে শুক্রবার সকাল থেকেই ভারি বর্ষণ ও দমকা হাওয়া বইতে শুরু করে। দুপুুর ১২ টা থেকে প্রবল বেগে বাতাসের গতিবেগ বেড়ে যায়। একই সাথে একটানা বৃষ্টি শুরু হওয়ায় জেলা শহরের রাস্তাঘাটসহ নিম্নাঞ্চাল পানিতে ডুবে যায়। পাশাপাশি নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় এবং প্রবল বাতাসে গাছপালা উপরে পড়ে। অপর দিকে ঝড়ো হাওয়ায় শহরের মহিলা কলেজের সামনে এবং বিভিন্ন স্থানে বৈদ্যুতিক তারের উপর গাছ উপরে পড়ে। এতে ১৭ নভেম্বর সকাল থেকেই বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। এদিকে জেলা প্রশাসন মিধিলি’র প্রভাবে সৃষ্ট দূর্যোগ থেকে নিরাপদে থাকতে সকলকে সতর্ক থাকার জন্য মাইকিং করেছে। এছারাও নদী তীরবর্তী মানুষদের নিকটবর্তী সাইক্লোন শেল্টারে আশ্রয় নিতে বলা হয়ে ছিল। ১৮ নভেম্বর সকাল থেকেই শহরের আটকে পড়া পানি ক্রমান্বয়ে নেমে যেতে শুরু করে। তবে মিধিলির প্রভাবে টানা বৃষ্টি, বাতাস ও সাময়িক পানি বৃদ্ধির কারনে সবজী আবাদের কিছুটা ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছে কৃষকরা।
তবে বিদ্যুৎ বিভাগের পূর্ব সতর্কতা ছিলনা বলে অভিযোগ গ্রাহকদের। কারণ হিসাবে অভিযোগ করে বলা হয়, প্রতি বছর লাখ লাখ টাকা বরাদ্দ আসে বৈদ্যুতিক তারের উপর ঝুঁকিপূর্ণ গাছপালা কেটে বিদ্যুৎ সচল রাখতে। রক্ষনাবেক্ষন খাতে বরাদ্দ পাওয়া এসব অর্থ এ কাজে না লিাগিয়ে কি ভাবে কোথায় খরচ হয় তা কেহই জানেনা। অথচ কর্তৃপক্ষ প্রায় সপ্তাহে শহরে মাইকিং করে সকাল বিকেল রক্ষনাবেক্ষন কাজের জন্য বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রাখে। তাই প্রশ্ন উঠেছে এ খাতের বরাদ্দ লোপাট করে লোক দেখানো মাইকিং করে কি হালাল করা হচ্ছে। নয়ত রক্ষনাবেক্ষন শুধু শহরে মাইকিংয়ের মধ্যে সিমাবদ্ধ কেন। কেন শহরের বাইরে বিশেষ করে ৩৩ কেভি লাইনের কালিজিরা থেকে ঝালকাঠি পর্যন্ত কোন রক্ষনাবেক্ষন করা হচ্ছেনা। যাতে ঘূর্ণিঝড় বা দূর্যোগের পর এভাবে গাছ পরে বিদ্যুত সরকরাহ বন্ধ রাখতে হয়। ফলে বিদ্যুৎ, পানি, মোবাইল নেটওয়ার্ক বন্ধ থাকায় অন্ধকারে ঝালকাঠির হাজার হাজর গ্রাহকের চরম দূর্ভোগ পোহাতে হয়। গত শুক্রবার মিধিলির কারণে সকাল ৮ টা থেকে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে পরদিন অর্থাৎ গতকাল শনিবার বিকেল ৫টা পর্যন্ত সরবরাহ বন্ধ থাকে। মিধিলির ঝড় হওয়ার কারণে শহরের মহিলা কলেজের সামনেও বৈদ্যুতিক তারের উপর একটি গাছ পড়ে। এতেও বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হবার পাশাপাশি ঐ সড়কে চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। গ্রাহকদের প্রশ্ন এ গাছটি যে ঝড়ের সময় ঝুঁকিপূর্ণ তা বিদ্যুৎ বিভাগ না দেখে কি রক্ষনাবেক্ষন করেন। এ বিষয়ে ঝালকাঠি অজোপাডিকো বিভাগের সহকারি প্রকৌশলী মো. আনোয়ার হোসেন সুমন জানান, মিধিলির ঝড়ো হাওয়ায় ৮/১০ টি স্থানে লাইনের উপর গাছ পড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় তা সংস্কার করতে এতো সময় লেগেছে। তবে তিনি জানান রক্ষনাবেক্ষনের বরাদ্দ অপ্রতুল।
এ ব্যাপারে ওজোপাডিকো’র নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুর রহিম জানান, ঝালকাঠি শহরে এবং কালিজিরা পয়েন্টে বরিশাল ঝালকাঠি সড়কে বড় বড় গাছ পড়ে বিদ্যুতের তার ছিড়ে যায় এবং খুঁটি হেলে পড়ে। বরিশাল ও ঝালকাঠি ফায়ার সার্ভিস এর সহযোগীতায় গাছ সরানো হয়েছে। অনেকগুলি গাছ সরাতে সময় লেগেছে, সেজন্য বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে দেরী হচ্ছে।