দূরযাত্রা রিপোর্ট ঃ ঝালকাঠি সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. শামিম আহমেদ যোগদানের পর থেকে ব্যাপক অনিয়ম দূর্নীতি করেও এখনো বহাল তবিয়তে। বিগত আওয়ামীলীগ সরকারের মন্ত্রী ও নেতাদের সহায়তায় দূর্নীতির তদন্ত চাপা দিয়ে তার ক্ষমতার অপব্যবহার অব্যাহত রেখেছেন। এবার দূর্নীতি দমন কমিশন এই দূর্নীতিবাজ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করেছে। ইতিমধ্যেই তার বিরুদ্ধে কিছু অভিযোগের প্রমান দুদকের হাতে চলে এসেছে। সেই সূত্র ধরে তদন্ত শুরু করেছে দুদক। তথ্য নির্ভরযোগ্য সূত্রের।
সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসানের বন্ধু তত্ত্বাবধায়ক শামিম কে দ্রুত প্রত্যাহারের দাবিতে স্বাস্থ্য উপদেষ্টা বরাবরে ঝালকাঠি সাংবাদিক সমাজ জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে স্মারকলিপি প্রদান করে ছিল গত ১৫ আগষ্ট। ঝালকাঠি প্রেসক্লাব, সংবাদপত্র পরিষদ, টেলিভিশন সাংবাদিক সমিতি, ঝালকাঠি টেলিভিশন জার্নালিস্ট এসোসিয়েশন, জাতীয় সাংবাদিক সংস্থা ও রিপোর্টার্স ইউনিটির নেতৃবৃন্দ স্বাক্ষর করে এ স্মারকলিপি প্রদান করে। জেলা প্রশাসক আশরাফুর রহমান এ বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দেন। তার বিরুদ্ধে সংবাদ প্রচার ও প্রকাশ করায় তিনি সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে কজন অসাধু চিকিৎসকদের নিয়ে মানববন্ধন করে ছিল।
স্বাস্থ্য উপদেষ্টা বরাবওে স্মারকলিপিতে উল্লেখ করা হয়, ১০০ শয্যাবিশিষ্ট সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. শামিম আহমেদ ২০২৩ সনের ১১ মার্চ ঝালকাঠি যোগদান করেন। সে থেকে তাঁর ক্ষমতার অপব্যবহার ও দুর্নীতির কারণে হাসপাতালটির স্বাস্থ্যসেবা ভেঙ্গে পড়েছে। বিতর্কিত এই তত্ত্বাবধায়কের অনৈতিক কর্মকান্ডে ঝালকাঠিবাসী ক্ষুব্দ। এমনকি হাসপাতালের চিকিৎসকসহ কর্মকর্তা-কর্মচারিদের মধ্যেও চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে।
স্মারকলিপির অভিযোগ গুলো হচ্ছে হাসপাতালের এক্সরে ফিল্ম নেই প্রায় তিন মাস। বাজারে ফিল্ম মূল্য ১২০ টাকা, সরকারি মূল্য ১৬৪ টাকা। কিন্তু তত্ত্বাবধায়ক ঠিকাদারের যোগসাজসে ২২৪ টাকা দরে দরপত্র আহবান করে। তাই ক্রয় কমিটি এতে সম্মতি দেয়নি। ফলে ফিল্ম আনার ব্যাপারে তত্ত্বাবধায়ক কোন উদ্যোগ নিচ্ছে না। এতে রোগীরা একদিকে আর্থিক ক্ষতিগ্রস্ত অন্যদিকে হয়রানী হচ্ছে। এ্যাম্বুলেন্সে প্রসূতি মায়েদের আনা নেওয়া ফ্রি হওয়ায় রেজিস্টার বইতে মিথ্যা ঠিকানা দিয়ে তেলের টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে। ঝালকাঠি সদর হাসপাতালের ১৫০ শয্যার নতুন ভবনের কাজ শেষ না হতেই সাবেক এমপি আমির হোসেন আমুকে দিয়ে উদ্বোধন করান। তার কাছ থেকে অনৈতিক সুবিধা নিতে ২০২৩ সনের ১৭ অক্টোবর নির্মাণাধীন ভবনটির উদ্বোধন করান। হাসপাতালের একটি নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা যায় উক্ত অনুষ্ঠানের আপ্যায়ন বাবদ ভুয়া ভাউচারে অর্ধ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেন। হাসপাতালের আউট সোর্সিং এ্যাম্বুলেন্স চালকের প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হলেও তাকে অবৈধ ভাবে ডক্টরস কোয়াটারে রেখে মেরামতের ভূয়া ভাউচার করিয়ে অর্থ আত্মসাৎ করছেন তত্ত্বাবধায়ক। রিমেল ঘূর্ণিঝড় দুর্যোগের সময় জেনারেটরের ২৪০ লিটার জ্বালানী খরচ ভাউচার দেখালেও খরচ হয়েছে ১০০ লিটার। তাই আরএমও ও এমও ঐ ভূয়া ভাউচারে স্বাক্ষর করেনি। প্রতি মাসে এভাবে ভূয়া ভাউচারের মাধ্যমে তিনি লাখ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেন বলে অভিযোগ রয়েছে। ঝালকাঠি সদর হাসপাতালে দরপত্রে উল্লেখিত ‘জোড়া কবুতর’ চাল না দিয়ে কম দরের ‘কিচনে কুইন’ চালের নিম্নমানের ভাত রোগীদের পরিবশেন করা হচ্ছে। তার পূর্বের কর্মস্থল রংপুরে থেকে বদলী হয়ে ঝালকাঠি আসার সময় সরকারি ল্যাপটপ নিয়ে আসেন। বিষয়টি জানতে পেরে রংপুরের সিভিল সার্জন সেটি ফেরত দিতে বলে চিঠি দেন তত্বাবধায়ক শামিমকে। ডা. শামিমের অনিয়ম দুর্নীতি স্বোচ্ছাচারিতার সংবাদ ঝালকাঠির স্থানীয় পত্রিকাসহ জাতীয় সংবাদপত্রে গুরুত্বের সাথে প্রকাশ পায়। এতে ক্ষুব্দ হন তিনি। এর জের ধরে তার অধিনস্ত ক’জন কর্মকর্তাকে চাপ সৃষ্টি করে তাদেরকে নিয়ে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে উদ্দেশ্যমূলক মিথ্যা অভিযোগে মানববন্ধন করান। নির্ধারিত অফিস সময়ে অফিসে আসেন না তিনি। নিজের ইচ্ছামতো সময়ে অফিস করেন। ফলে কতিপয় চিকিৎসক তার পথই অনুসরণ করে হাসপাতালে আসায় রোগীরা সুচিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এসব দুর্নীতির সংবাদ পত্রিকায় প্রকাশিত হলে তিনি আওয়ামীলীগ সরকারের সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসান’কে দিয়ে তদবীর করাতেন। ডা. মুরাদ বন্ধু হওয়ায় তাকে ব্যবহার করে ডা. শামিম আহমেদ তার বিরুদ্ধে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তদন্ত চাপা দিতে সক্ষম হন।
তত্ত্বাবধায়কের বিরুদ্ধে দূর্নীতির তদন্তের বিষয়ে ঝালকাঠি-পিরোজপুর জোনের দুদক উপ-পরিচালক মো. আমিনুল ইসলাম জানান, তার বিরুদ্ধে হাসপাতালের বিভিন্ন অনিয়ম ও দূর্নীতির সূত্র ধরে দুদুক স্বেচ্ছাপ্রনোদিত হয়ে ইতিমধ্যেই তদন্ত শুরু করেছে। এক সপ্তাহ আগে এ তদন্তের কাজ শুরু হয়েছে। গতকাল ৩ নভেম্বর এ বিষয়ে তাকে দুদক কার্যালয়ে ডাকা হয়ে ছিল। তিনি এসে ছিলেন। তবে আমার সাথে দেখা হয়নি। এ প্রসঙ্গে তত্ত্বাবধায়ক ডা. শামিম আহমেদের কাছে জানতে চাইলে তিনি প্রতিবেদককে বলেন, এটা অফিসিয়াল বিষয়, এটা আপনার জানার দরকার নেই।