দুরযাত্রা রিপোর্ট: ঝালকাঠি-১ (রাজাপুর-কাঠালিয়া) আসনের আওয়ামীলীগ সরকারের সাবেক এমপি শাহজাহান ওমরের গাড়ি বের হলে হামলার ঘটনা ঘটেছে। ২১ নভেম্বর সকাল সাড়ে ৮ টার দিকে ওমর ঢাকা থেকে রাজাপুরের বাড়িতে আসার পথে পেংরি নামক স্থানে এ ঘটনা ঘটে। ঘটনার পর শাহজাহান ওমর রাজাপুর থানায় অবস্থান নেয়। এরপর গত ২০ নভেম্বর ২০২৪ তারিখ কাঠালিয়া উপজেলা বিএনপি অফিস ভাংচুর মামলায় শাহজাহান ওমরকে গ্রেফতার দেখিয়ে ঝালকাঠি আদালতে পাঠানো হয়েছে। আদালত তাকে জেল হাজতে পাঠায়। তার গাড়িটি জব্দ করেছে পুলিশ।
রাজাপুর থানায় ওমর আশ্রয় নেয়ার পর পার্শবর্তি রাজাপুর মডেল পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে উপজেলা বিএনপি নেতাকর্মীরা অবস্থান নেয়। এ নিয়ে রাজাপুরে উত্তেজনা বিরাজ করছে। বেলা ১২ টার দিকে পুলিশ ও সেনাবাহিনী থানার পার্শবর্তি এলাকা থেকে সবাইকে সরিয়ে দিয়ে ঝালকাঠি নেয়ার প্রস্তুতি নেয়।গাড়িতে এবং ওমরের উপর হামলা বিষয়ে পেংরি এলাকার প্রতক্ষদর্শীরা জানায় সকালে শাহাজান ওমরের গাড়ি সেখান থেকে যাবার পথে গতিরোধ করে এলাকার বিএনপি নেতাকর্মী ও জনতা। এরপর তার গাড়ি ভেঙ্গে ফেলা হয়। তখন ওমরকে গাড়ির বাহিরে নামানোর চেষ্টা করা হলে গাড়ি চালক কোন মতে রাজাপুরের দিকে তাকে নিয়ে দ্রত ঘটনাস্থল ত্যাগ করে।
এ সময় ওমরের হাতে আঘাত লেগেছে বলে জানাযায়। উল্লেখ্য শাহজাহান ওমর বিএনপি থেকে পদত্যাগ করে ২০২৩ সনে জেল থেকে বেড়িয়ে আওয়ামীলীগে যোগ দেয়। এতে এলাকাবাসি ও নেতাকমীরা ক্ষুদ্ধ হয়। কিন্তু আওয়ামীলীগ সরকার ক্ষমতায় থাকায় এলকায় এ নিয়ে কেহই উচ্চ বাচ্চ করতে পারেনি। বরং তখন ওমর আওয়ামীলীগের এমপি হিসাবে এলাকায় এসে জোরপূর্বক বিএনপি নেতাকর্মীদের উপর চাপ প্রয়োগ করে তার দলে যোগ দেয়ার জন্য ভয় ভীতি দেখায়। তবে এলাকায় বিএনপির এমপি হিসাবে ওমরের জনপ্রীয়তা থাকায় কিছু নেতাকর্মীরা তার সাথে যোগ দিলেও কাঠালিয়া রাজাপুর বিএনপির মূল ধারার নেতাকর্মীদের তার সাথে নিতে পারেনি। এ অবস্থায় গতকাল তাকে রাজাপুরে পেয়ে বিএনপির নেতাকর্মী ও এলাকাবাসি ক্ষুদ্ধ হয়ে এ ঘটনা ঘটায়। এদিকে ১২ টা ৪০ মিনিটে শাহজাহান ওমরকে সেনাবাহিনী ও পুলিশ প্রহরায় ঝালকাঠি আদালতে আনা হয়েছে। এ সময় ক্ষুদ্ধ বিএনপির নেতাকর্মীরা আদালত প্রাঙ্গণের আশেপাশে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করে। তাকে বহন করা গাড়ি চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে প্রবেশের পর প্রধান ফটক আটকে দেয়া হয়। তখন বিক্ষুদ্ধ নেতাকর্মীরা শাহজাহান ওমরের দুই গালে জুতা মারো তালে তালে শ্লোগান দিতে থাকে। এসময় তার গাড়ি লক্ষ্য করে ডিম ও জুতা নিক্ষেপ করা হয়। এ অস্থায় ১২ টা ৫০ মিনিটে ওমরকে সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট কাঠালিয়া আদালতে আনা হয়। আদালতে তার পক্ষে কোন আইনজীবী না থাকায় আদালতের বিচারক আফরোজ বিনতে শহীদ জেল আজতে প্রেরণ করেন। কিন্তু জেলে নেয়ার সময় আদালতের প্রধান গেটের বাহিরে অবস্থান নেয়া ক্ষুদ্ধ জনতা ও নেতাকর্মীরা তার গাড়ি থামিয়ে জুতা হাতে নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে।
ঝালকাঠি জেলা বিএনপির সদস্য সচিব ও জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি শাহাদাৎ হোসেন জানান, আদালতে ওমরের পক্ষে কোন আইনজীবী না থাকায় বিচারক জেল হাজতে প্রেরন করেছে। আদেশ পরে দেয়া হবে। তবে ওসর জিজ্ঞাসাবাদের জন্য কোন রিমান্ড আবেদন করা হয়নি বলেও তিনি জানান। গ্রেফতার হওয়া মামলার এজাহারের বিবরনে বাদি উল্লেখ করেন, গত ৪ ডিসেম্বর ২০২৩ সালে সকাল ১১ টার দিকে কাঠালিয়া উপজেলা বিএনপি অফিস ভাংচুর করা হয় শাহজাহান ওমরের নেতৃত্বে। এ সময় অপর আসামীরা তার নির্দেশে অফিসে থাকা খালেদা জিয়া, জিয়াউর রহমান ও তারেক জিয়ার ছবি ভাংচুর করে অফিসে আগুন জ্বালিয়ে দেয়। এ ঘটনায় কাঠালিয়া উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আখতার হোসেন মীরবহর বাদী হয়ে গত ২০ নভেম্বর ২০২৪ তারিখ কাঠালিয়া থানায় মামলা দায়ের করেন । মামলায় শাহজাহান ওমরকে প্রধান করে মোট ৩৫ জনকে আসামী করা হয়। আজ শাহজাহান ওমর রাজাপুর এলে এই মামলায় তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
এ বিষয়ে ঝালকাঠির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সদর সার্কেল মহিতুল ইসলাম জানান, শাহজাহান ওমর একটি বিষয়ে রাজাপুর থানায় অভিযোগ করতে এসে ছিলেন। তখন তাকে কাঠালিয়া থানার একটি নিয়মিত মামলায় গ্রেফতার করে আদালতে পাঠানো হয়েছে।