দূরযাত্রা রিপোর্ট ॥ ঝালকাঠির কাঠালিয়া উপজেলার পশ্চিম তারাবুনিয়া গ্রামে ৯ম শ্রেনীর ছাত্রী কিশোরী গণধর্ষনের ঘটনায় কাঠালিয়া থানায় ৩ জনকে আসামী করে মামলা দায়ের হয়েছে। গত বুধবার রাতে কিশোরীর পিতা বাদী হয়ে এ মামলা করেন। ঘটনার সাথে জড়িত কাউকে গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি বলে জানিয়েছে কাঠালিয়া থানা পুলিশ। এদিকে পুলিশের সহায়তায় বৃহস্পতিবার ভিকটিম কিশোরীর মেডিকেল পরীক্ষা শেষে ম্যাজিষ্ট্রেটের কাছে জবানবন্দী নেয়া হয়েছে বলে কিশোরীর ভাই জানায়।
মামলায় আসামীরা হলো, পাটিখালঘাটা ইউনিয়নের ২ নং পশ্চিম তারাবুনিয়া গ্রামের মোঃ সেলিম খানের ছেলে মোঃ সাগর খান (২৭), একই গ্রামের হাকিম জোমাদ্দারের ছেলে রাকিব (২৪) এবং নুরুল ইসলাম জোমাদ্দারের ছেলে মোঃ মনির জোমাদ্দার (৪০)।
কাঠালিয়া থানায় দায়ের করা মামলায় বাদী উল্লেখ করেন, ১২ ডিসেম্বর আনুমানিক সন্ধ্যা পৌনে ৬ টার দিকে কাঠালিয়ার চেচরিরামপুর ইউনিয়নের মহিষকান্দি গ্রামের ভিকটিমকে কথিত প্রেমিক সাগর খান তার মায়ের সাথে দেখা করানোর কথা বলে নিয়ে আসে। পরে পাটিখালঘাটা ইউনিয়নের পশ্চিম তারাবুনিয়া গ্রামের জনৈক সুরঞ্জন শীলের পরিত্যক্ত ঘরে এনে ভয় ভীতি প্রদর্শন করে তাকে ধর্ষণ করে। এসময় সেখানে সাগরের সাথে ঘরের বাইরে অবস্থান করা একই ঠিকনার রাকিব ঘরে প্রবেশ করে এবং ভিকটিমকে ধর্ষন চেষ্টা করে। কিন্তু ভিকটিম রাকিবকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিলে সেখানে সাগরের আরেক সঙ্গী মোঃ মনির জোমাদ্দার প্রবেশ করে এবং ভয়ভীতি দেখিয়ে জোরপূর্বক ধর্ষণ করে পালিয়ে যায়।
ভিকটিমের একমাত্র ভাই জানায়, তার বোনকে আনুমানিক বিকেল ৫ টায় ঘটনা স্থলের পরিত্যাক্ত ঘরে নিয়ে আটকানো হয়। সংঘবদ্ধ ধর্ষনের পর সন্ধ্যা ৭ টায় তাকে এবিষয়ে কোন অভিযোগ না করতে দেশীয় ধারালো অস্ত্র দেখিয়ে ভয়ভীতি প্রদর্শন করে আসামীরা। তবে তারাবুনিয়া ক্যাম্প ইনচার্জ মতিয়ার রহমান সাগরের সন্দেহজনক কথাবার্তার সূত্র ধরে তাকে আটক করতে পারত। তা না করে তাকে ছেড়ে দেয়া হয়। আসামী মনির সহ ২ জন গতকাল দুপুরে এলাকা ছেড়ে ভান্ডারিয়া থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে পালিয়ে যায় বলে জানতে পেরেছি। এর মধ্যে মনিরের বৃহস্পতিবার রাতে কুয়েত যাওয়ার কথা জানাগেছে। ঘটনার পর নিকটবর্তী তারাবুনিয়া পুলিশ ক্যাম্পে বিষয়টি কিশোরি জানালে ক্যাম্প ইনচার্জ পরিদর্শক মতিয়ার রহমান অভিযুক্ত সাগরকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছিল। এরপর তাকে ছেড়ে দেয়া হয়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ক্যাম্প ইনচার্জ পরিদর্শক মতিয়ার রহমান বলেন, ছেলে ও মেয়েটির সাথে সম্পর্কের সূত্র ধরে ছেলেটি ভুল তথ্য দিয়ে এখানে ডেকে এনে ছিল। সাগর খান মেয়েটিকে বলেছে তাকে বিয়ে করবে। তাই তার বাবা ও মা মেয়েটিকে দেখতে চেয়েছে বলে নিয়ে এসে ধর্ষন করার কথা শুনেছি। ক্যাম্প ইনচার্জ আরো জানান, সাগর জিজ্ঞাসাবাদে জানায় মেয়েটি আমার বাড়ি দেখতে এসেছিল। কিন্তু মেয়েটিকে মিথ্যা আশ্বাসে এখানে আনার অপরাধে সাগরকে আটক করা হয়নি কেন জানতে চাইলে ইনচার্জ বলেন মেয়েটি কোন লিখিত অভিযোগ করেনি।
এব্যাপারে মৌখিক অভিযোগ পেয়ে রাজাপুর-কাঠালিয়া সার্কেলের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার মাসুদ রানা বুধবার রাতেই ভিকটিমকে নিয়ে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন। এসময় ভিকটিম কিশোরী ঘটনার বিস্তারিত বর্ননা তুলে ধরেন। তখন সেখানে কিশোরির বাবা ও মা উপস্থিত ছিলেন।
এবিষয়ে কাঠালিয়া থানার ওসি তদন্ত শমির কুমার দাস জানান, বুধবার রাতে মেয়েটির বাবা ৩ জনের নাম উল্লেখ করে মামলা দায়ের করেছে। মেডিকেল চেকাপের জন্য পুলিশের হেফাজতে ভিকটিমকে ঝালকাঠি সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। এব্যাপারে তদন্ত চলছে। এখন পর্যন্ত কাউকে গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি।